প্রমাণ নষ্ট করতে দুর্বৃত্তরা হত্যার পর নদীতে ফেলে দিচ্ছে লাশ

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:১৫ এএম
প্রমাণ নষ্ট করতে দুর্বৃত্তরা হত্যার পর নদীতে ফেলে দিচ্ছে লাশ

প্রমাণ লোপাটে দুর্বৃত্তরা হত্যার পর নদীতে ফেলে দিচ্ছে লাশ। আর দীর্ঘ সময় পানিতে থাকায় লাশের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয় না। কারণ তাতে চেহারা বিকৃত এবং আঙুলের ছাপ মুছে যায়। মূলত পানিতে দেহ দ্রুত পচে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়। কখনো কখনো মাছের কামড় বা জাহাজের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফরেনসিক চিকিৎসকরা বিভ্রান্ত হন। প্রাথমিক তদন্তে হত্যা মনে না হলে লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ সাধারণত অপমৃত্যুর মামলা করে। তবে তদন্তে বা ময়নাতদন্তে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেলে পরে সেটি হত্যা মামলায় রূপান—রিত হয়। বাধ্য হয়ে পুলিশ উদ্ধারকৃত লাশের ডিএনএ সংরক্ষণ করে রাখে। যাতে কেউ মরদেহ শনাক্ত করতে এলে মিলিয়ে দেখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন থানায় নিখোঁজ ডায়ারির সঙ্গে তাদের তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নদী থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত দেড় বছরে ৭৫০টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে নদীতে গড়ে ৪২টি মরদেহ মিলছে। তার মধ্যে এখনো ৩৯১টির লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। দীর্ঘ সময় পানিতে থাকার কারণে এসব মরদেহ শনাক্তে সমস্যা দেখা দেয়। মূলত খুনিরা হত্যার পর প্রমাণ লোপাট এবং আইনের চোখ ফাঁকি দিতেই মরদেহগুলো নদীতে ফেলে দিচ্ছে। 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে নদী। এখন ওই নদী হচ্ছে দুর্বৃত্তদের লাশ ফেলার অন্যতম স্থান। সম্প্রতি বুড়িগঙ্গা নদী থেকে একদিনেই উদ্ধার হয়েছে ৪টি লাশ। ময়নাতদন্তেহ প্রাথমিকভাবে হত্যার পর ওসব লাশ ফেলে দেয়ার তথ্য মিলেছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় এক মাসেও ওসব লাশের পরিচয় মেলেনি। সাধারণত পরিচয় জানা সম্ভব না হলে তদন্তেও অগ্রগতি হয় না। হত্যার সূত্র খুঁজে পেতে পরিচয় শনাক্ত করা জরুরি। কিন্তু নদী থেকে উদ্ধার মরদেহ শনাক্ত করতে প্রায়ই পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। যা হত্যা রহস্য উদ্ধারে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র আরো জানায়,  অপরাধীরা সাধারণ গ্রেফতার এড়াতেই হত্যর পর মরদেহ নদীতে ফেলে দিচ্ছে। চলতি বছর প্রতি মাসে নৌ-পুলিশ গড়ে ৪৩টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। আর গত বছর প্রতি মাসে এই সংখ্যা ছিল ৩৬টি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত নদী থেকে দেশ জুড়ে অন্তত ৩০১ নারী-পুরুষ ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সর্বোচ্চসংখ্যক ৩৪টি মরদেহ পাওয়া গেছে। তারপরের অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। সেখানে ওই সময়ের মধ্যে৩২টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ২০৯ জনের পরিচয় জানা গেলেও ৯২ জন এখনো অজ্ঞাত। আর গত বছর নদী থেকে ৪৪০টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল। তার মধ্যে এখনো ১৪১ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। মরদেহ উদ্ধারের পর এ বছর বিভিন্ন থানায় অন্তত ৪১টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। গত বছর ৫৩টি মামলা হয়েছিল। মরদেহের অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক প্রমাণ সাপেক্ষে সন্দেহজনক মনে হলে নৌপুলিশ হত্যা মামলা দায়ের করে। তবে হত্যার প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।

এদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত প্রমাণ নষ্ট করতে ও আইনের চোখ ফাঁকি দিতেই হত্যার পর মরদেহ ফেলার জন্য নদী ও রেলপথ বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। নদীতে এমন অনেক লাশ পাওয়া যায় যেগুলো অনেক বেশি পচে গেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা নিহত ব্যক্তির ঠিকানা থেকে অনেক দূরের এলাকায় মরদেহ ফেলে। কখনো কখনো লাশ ভাসতে ভাসতে অনেক দূরে চলে যায়। ফলে পরিবার খোঁজ পায় না। তাতে অজ্ঞাত থেকে যায় অনেক লাশ এবং পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা নৌ-পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, যখন পরিচয় শনাক্ত করতে পারে না এবং দীর্ঘ সময় পরও মামলার অগ্রগতি হয় না, তখন সদর দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য কোনো সংস্থাকে তদন্তের ভার দেয়া হয় অথবা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। তবে কেউ মরদেহ শনাক্ত করতে এলে মিলিয়ে দেখার জন্য ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করে রাখা হয়।