গাজায় একই পরিবারের ২৫ জনকে হত্যা করল ইসরায়েলি সেনারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০৩ পিএম
গাজায় একই পরিবারের ২৫ জনকে হত্যা করল ইসরায়েলি সেনারা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। গাজা সিটির সাবরা এলাকায় বিমান হামলায় একই পরিবারের অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আল জাজিরা জানিয়েছে, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোরে এ হামলা হয়, যেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ আটকা রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্ধারকর্মীদের উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানায়, ভোরে সাবরা এলাকায় একাধিক বাড়িতে বিমান হামলা চালানো হয়। এরই মধ্যে অন্তত ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পরিবারের সদস্যদের দাবি—ধ্বংসস্তূপের নিচে হয়তো ৫০ জন পর্যন্ত চাপা পড়ে আছেন। খালি হাতে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হলেও উদ্ধারকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ড্রোন থেকে গুলি চালিয়ে তাদের বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। এক স্বজনের ভাষায়, “আমরা চাপা পড়াদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু পৌঁছাতে পারছি না। প্রতি পাঁচজন উদ্ধার করতে গেলে চারজন নিহত হন, একজন বেঁচে ফেরেন।”

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হতাহতদের ছোট যানবাহনে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অন্য এক ভিডিওতে এক মা বিলাপ করছেন—“আমার সব সন্তানকে হারালাম।”

এদিকে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলা আরও জোরদার হয়। পশ্চিম গাজার শাতি শরণার্থী শিবির, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তাল আল-হাওয়া, নাসর জেলার লাভাল টাওয়ার ও পাশের বাড়িতেও ভয়াবহ বোমাবর্ষণ করা হয়। মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে আরও একটি হামলায় চার শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। জরুরি সেবার একটি সূত্র আল জাজিরাকে জানায়, এই হামলার লক্ষ্য ছিল জাতিসংঘের প্যালেস্টাইন শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর একটি ক্লিনিকের পাশের এলাকা।

ওয়াফা বার্তা সংস্থা চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, শুধু রোববার ভোর থেকে অন্তত ৬৮ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ২৮৩ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে এখন পর্যন্ত ৪৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪৭ জন শিশু। গত একদিনেই এই কারণে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্র ও রাস্তায় রিমোট-কন্ট্রোল বিস্ফোরক রোবট পুঁতে রাখায় মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন। “মানুষের চলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছে, চারপাশ এখনও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন,” বলেন তিনি।

ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলে তাদের তিনটি ডিভিশন স্থল অভিযান চালাচ্ছে এবং দক্ষিণে খান ইউনিসে আরেকটি ডিভিশন মোতায়েন রয়েছে। তাদের দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় বহু “সন্ত্রাসী”কে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে শুরু থেকে গাজা সিটি থেকে তিন লাখেরও কম মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যদিও ইসরায়েল দাবি করছে এ সংখ্যা সাড়ে চার লাখেরও বেশি।

বহু আন্তর্জাতিক মহল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের তীব্র বিরোধিতা করেছে। রোববার পোপ লিও আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সহিংসতা, জোরপূর্বক নির্বাসন ও প্রতিশোধের ওপর কোনো ভবিষ্যৎ দাঁড়াতে পারে না।”