পাবনা-৩ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী নিয়ে নানা গুঞ্জন

এফএনএস (হেলালুর রহমান জুয়েল; চাটমোহর, পাবনা) : | প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪৩ পিএম
পাবনা-৩ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী নিয়ে নানা গুঞ্জন

“আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। ৫০টির মতো আসনে প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সমমনা দল ও জোটকে আসন ছাড় দেওয়ার পর বাকি আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়। পত্রিকার সংবাদে বলা হয়,দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর খোঁজে এরই মধ্যে একাধিক মাঠ জরিপ করা হয়েছে। সেই জরিপের ফল এবং দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের মতামত ও তৃণমূলে জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রার্থী তালিকা অনেকটাই চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই নেতারা জানান,ওই তালিকা ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্ভাব্য প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দিচ্ছেন। তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলছেন। যেসব এলাকায় কোন্দল আছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিভাজন আছে,সেসব এলাকার প্রার্থীদের স্কাইপে সংযুক্ত করে দলের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন,তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে বলছেন। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন। বিএনপি মৌখিকভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিয়ে মাঠে নামাচ্ছে। 

সবুজ সংকেত পাওয়া প্রার্থীদের তালিকার মধ্যে রয়েছেন পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তুহিনের সমর্থকরা সোমবার রাতেই আনন্দ মিছিল করেছে। শুরু হয় নানা গুঞ্জন। তুহিনের সমর্থকরা মিষ্টিও বিতরণ করে। কিন্তু প্রতিপক্ষ এই সংবাদকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়। যার সত্যতা মিলেছে  মঙ্গলবার বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড.রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও দলটির পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে,প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র পার্লামেন্টারি বোর্ডের হাতে এবং সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তাই মনগড়া সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমুখ।

এদিকে পাবনা-৩ আসনে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সমর্থকরা এই সবুজ সংকেতের খবরে আনন্দিত হয়ে পড়েন। তারা মিষ্টি বিতরণসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসার ঝড় তোলেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে মন্তব্যও করেন কেউ কেউ। যদ্রি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ২ মাসের অধিক সময় ধরে পাবনা-৩ আসনে গণসংযোগ,সভা-সমাবেশ করছেন। টাঙিয়েছেন বিশাল বিশাল বিলবোর্ড। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা চাটমোহরের ভোটারও হয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ তার মনোনয়ন পাওয়া বা প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি মানছেন। তেমনি মানছেন না সবুজ সংকেতের বিষয়টিও। এই আসনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা। তারা জানান,দল এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। সবুজ দেওয়া তো দূরের কথা। এই দুই নেতা তাদের কর্মী-সমর্থকদের গুজবে কান না দিয়ে বিভান্তি না হওয়ার আহবান জানান।  

রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন,কোনো নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হয়নি। দলের গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ দায়িত্ব একমাত্র পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করে এবং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “তফসিল ঘোষণার আগে কোনো মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এখন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তালিকা বা সংবাদ সম্পূর্ণ মনগড়া।” তিনি অভিযোগ করেন,কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপির ভেতরে বিভেদ সৃষ্টি এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে অসনে—াষ উসকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি দাবি করেন, “একটি কুচক্রি মহল অপতথ্য ও প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বিএনপিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে।” তিনি আরও জানান,নির্ধারিত সময়েই গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে