ইরানে চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছে। মাত্র ৯ মাসে অন্তত এক হাজার মানুষকে ফাঁসি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর)। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, গত কয়েক মাসে দেশটির কারাগারগুলোতে এক ধরনের ‘গণহত্যা অভিযান’ চালানো হয়েছে, যার প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর প্রতিক্রিয়া না থাকায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আইএইচআরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত সপ্তাহেই ইরানে ৬৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৯ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বছরের আরও তিন মাসের বেশি সময় বাকি থাকলেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ইতোমধ্যে সংস্থাটির রেকর্ডে সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০০৮ সাল থেকে আইএইচআর ইরানে ফাঁসি কার্যকরের তথ্য সংরক্ষণ করে আসছে। এর আগে, ২০২৪ সালে দেশটিতে সর্বোচ্চ ৯৭৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সংস্থাটি মনে করছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ ইরানে তথ্যপ্রবাহের স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে এবং সংবাদ প্রচারে নানা বিধিনিষেধ কার্যকর আছে।
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধকালে বিপুলসংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেও গত তিন দশকে একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা নজিরবিহীন।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কারাগারগুলোতে “গণহত্যা অভিযান” চালানো হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ইরানে চলমান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচ্যসূচিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, তাদের সঙ্গে ইরানের যেকোনো আলোচনায় মৃত্যুদণ্ডের সংকটকে অন্তর্ভুক্ত না করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় কেবল ফাঁসির মাধ্যমে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা কারাগারের ভেতরে হলেও মাঝে মাঝে প্রকাশ্যেও ফাঁসি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ড, মাদকপাচার, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতাসহ বিভিন্ন বড় অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে দেশটিতে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর চীনের পর সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ তথ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান মেলে না।
প্রসঙ্গত, জুন মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধের পর ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও একই সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ড ইস্যুটিও আন্তর্জাতিক আলোচনায় অগ্রাধিকার পাওয়া জরুরি।