কৃষি প্রধান এই দেশে মৌসুমে উৎপাদিত ধান সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। দেশের কৃষক পরিবার গুলো মৌসুমে উৎপাদিত ধান কাটার পর পারিবারিক খরচ নির্বাহের জন্য মাড়াই করে কিছু ধান বিক্রি করে দিয়ে থাকে। অবশিষ্ট ধান সারা বছর পরিবারের প্রয়োজনে সংরক্ষণ করে রাখে। ধানের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম হলে বস্তার মধ্যে রাখে অনেক গৃহস্থ পরিবার। তবে বস্তার মধ্যে সংরক্ষণ করলে ঘরে জায়গা দখল হয়ে যায়। আবার ইঁদুর বস্তা কেটে ধান নস্ট করে ফেলে। তাই যেসব কৃষক পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি তারা সারা বছর ভাতের চাহিদা পুরনের জন্য বাঁশের তৈরি ডোল / গোলা / কাইজ্জ্যার মধ্যে ধান সংরক্ষণ করে রাখে। এই পদ্ধতি ধান সংরক্ষণের এনালক পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত। অবশ্য এই পদ্ধতিতে সাংবাৎসরিক ধান সংরক্ষণ সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম বিত্তশালী কৃষক পরিবার করে থাকে। গৃহস্হ বাড়িতে ধান সংরক্ষণের জন্য একটি আলাদা ঘর থাকত এক সময়। সেই ঘর গোলা ঘর হিসাবে পরিচিত। ডোল / গোলায় ধান রেখে ডোলের মুখ প্রথমে ধানের খড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে তার উপর মাটি ও গরুর গোবর দিয়ে প্রলেপ দিয়ে রাখার নিয়ম প্রচলন ছিল। এতে ধান তেমন নস্ট হয়না
তবে অপেক্ষাকৃত বিত্তশালী গৃহস্থ পরিবার ঘরের বাইরে টিনের কিংবা ইটের পাকা গোলা ধান সংরক্ষণের জন্য তৈরি করে থাকে। টিনের/ পাকা গোলা ধান সংরক্ষণের জন্য বেশি উপযোগী। কারন সেই গোলার উপরের মাঝ খানে একটি দরজা থাকে, সেই দরজা দিয়ে গোলার ভিতরে ঢুকে ধান নিয়ে পরিবারের প্রয়োজনের সময় ধান গুকিয়ে মিলিং করে চাউল করে পরিবারে ব্যবহার করা সহজ হয়। অতীতে এক সময় ছেলের বিয়ের জন্য কোন পরিবারে মেয়ে দেখতে গেলে তাদের (মেয়ের) পরিবারে ধানের গোলা কত বড় সাইজ সেই বিষয় সর্বাগ্রে দেখে নিত। মেয়ের পরিবারের ধানের গোলা দেখে আত্মীয় করার বেওয়াজ ছিল বেশী। ধান কাটার মৌসুম শুরু হলে গ্রামে গ্রামে ডোল/ গোলা / কাইজ্জ্যা তৈরীর ব্যস্ত সময় কাটাতেন বাঁশ বেতের কাড়িগড়। ধান সংরক্ষণের পরিমাণে উপর ২০ আড়ি, ২৫ আড়ি, ৫০ আড়ি কিংবা ততোধিক পরিমাণ ধান সংরক্ষণ করার জন্য গৃহস্থ পরিবার কারিগড়কে ডোল/ গোলা / কাইজ্জ্যা তৈরীর অডার দিত। সাইজ অনুসারে মূল্য নির্ধারণ করা হয় ডোলের। অবশ্য বর্তমানে ইঁদুরের উৎপাতের কারনে অনেক গৃহস্থ পরিবার সারা বছরের জন্য তেমন ধান সংরক্ষণ করে না। জমি থেকে ধান কেটে এনে মাড়াই করে বিক্রি করে দিয়ে থাকে। স্বল্প পরিমাণ কয় মাসের জন্য রেখে বাদবাকি ধান বিক্রি করে দিয়ে থাকে। অন্য সময় দোকান থেকে চাউল ক্রয় করে পরিবারে ব্যবহার করে থাকে। তাই পূর্বের মত গ্রামের যেখানে সেখানে তেমন আর ডোল / গোলা তৈরির কারার কাজ দেখা যায় না।