অনুমোদিতো ডিজাইন বহুর্ভুত কাজ করায় ঝালকাঠি জেলার নলছিটি ১০২ নং বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ ৬ মাসের অধিক সময় ধরে। কাজ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের পুরোনো জরাজীর্ণ দুই তলা ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয় এ বছরের শুরুর দিকে। কিন্তু কাজের মধ্যখানে এসে তাদের মনে পড়ল ডিজাইন বহির্ভূত কাজ হচ্ছে। কলাম থেকে কাজ শুরু করে ছাদের সেন্টারিং করার সময় কাজের ত্রুটি ধরা পরে। এমতাবস্থায় ছাদের সেন্টারিং করেই বন্ধ করে দেয় স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ। ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকে নির্মাণ কাজ। ঠিকাদার ও এলজিইডি একে অপরকে দুষেছন।
এ বছরের শুরুতে ১ কোটি ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধিনে বিদ্যালয়টির পুরাতন ঝড়াজীর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছকিনা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু হঠাৎকরেই নির্মান কাজ ফেলে রাখা হয় ।
অনুসন্ধানে জানাযায় প্রথম তলার ছাদের ঢালাই প্রস্তুতিকালে শিডিউলের ডিজাইন ও কাজের প্রক্কলন বাজেট নিয়ে নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে জটিলতা দেখা দেয়। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে ডিজাইন অনুযায়ী ঐ বিদ্যালয়ের কাজে পাথর দিয়ে শর্ট কলাম করে উপরে ব্রীক দিয়ে কাজ করার কথা ছিলো। কিন্তু ঠিকাদার শর্ট কলামের উপরেও পাথর দিয়ে কাজ করে। ছাদের সেল্টারিং দিয়ে ছাদ ঢালাইয়ের সময় নজরে আসে ডিজাইন ও নকশা। দেখতে পান ডিজাইন ও নকশার সাথে মিল নেই কাজের। ঐ বিদ্যালয়ের কাজের দায়িত্বে ছিলেন নলছিটি এলজিইডির এসও মইনুল। উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের নজরে আসলে তিনি কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল হওয়া কাজের সংশোধিত ডিজাইন ও নকশা অনুমোদন আবেদন জানায় নলছিটি এলজিইডি। দীর্ঘ ৬ মাস নির্মান কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পরেছে স্কুলের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ছোট একটি জরাজীর্ণ ঝুকিপুর্ন ভবনে গাদাগাদি করে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সে ভবনটির বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খুলে পড়েছে তাতে ঠিক মত পাঠদান সহ পরীক্ষা দিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এতে দুর্ঘটনার আশংকা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। নির্মানাধীন বিদ্যালয়টি সড়কের পাশে হওয়ায় ভবন নির্মাণের নির্মান সামগ্রী বালু রেখে দেয়া হয়েছে সড়কের মধ্যে। এতে শিক্ষার্থীরা সহ বিভিন্ন মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভবনটির ছাদ ঢালার জন্য বাঁশ দিয়ে সেন্টারিং করা হয়েছে তাও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। যেকোন সময় বাঁশ ছুটে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আশা করছে, খুব শিগগিরই নতুন ভবনের কাজ শেষ হবে এবং তারা আধুনিক ও নিরাপদ ভবনে পড়াশোনার সুযোগ পাবে।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের রিভাইজ (বাজেট বৃদ্ধি) করতেই ইচ্ছে করেই এ কাজ করেছেন। আর এলজিইডি কর্তৃপক্ষ মানে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাইনুল জোমাদ্দারের গাফলতি দায়ি করছেন। সরকারি অর্থ গচ্চা আর কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
এব্যাপার একাধিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান দীর্ঘ দিন নতুন ভবনের কাজ বন্ধ থাকায় তাদের পড়াশুনা সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাই দ্রুত কাজ শেষ করার অনুরোধ করে তারা।
নলছিটি বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সারাহ্ পারভীন রিংকু জানান, পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে নতুন কাজ শুরুর কিছু দিনের মধ্যে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা হতাশা গ্রস্ত হয়ে পরেছি। শহরের প্রান কেন্দ্রে স্কুলটি হওয়ায় প্লে নার্সারি শ্রেণীর শিক্ষা দিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ক্লাসের সংখ্যা বেশী থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। দীর্ঘ দিন ভবনের কাজ বন্ধ থাকায় ক্লাস নিতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে বাচ্চাদেরও ক্লাস করতে ভোগান্তি হচ্ছে।
নতুন ভবনের কাজ বন্ধ থাকায় আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু এটি উপকূলীয় এলাকা। উপজেলা প্রকৌশলী ইকবাল কবিরের পরামর্শে তিনি ব্রীকের পরিবর্তে পাথর দিয়ে কাজ করেছেন। তিনি তখন বলেছিলেন অফিসের সাথে কথা বলে পক্কলন বাজেট বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী অফিস থেকে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে গেছেন। বৃদ্ধি হওয়া প্রচলিত বাজেটের চিঠি আসলে কাজ শুরু করা হবে। কাজের এস্টিমেট না দেখে ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করেছি তাই এ ভুল হয়েছে।
নলছিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা: শিরিন আকতার বলেন, ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীরা পাঠদানে কিছুটা অনিরপদ মনে করছে ।
এ ব্যাপারে কাজের নির্ধারিত উপ-প্রকৌশলী মাইনুল জমাদ্দার বলেন, শর্ট কালন থেকে কাজ শুরু করে ছাদ ঢালাই এর পূর্বে এ ত্রুটি ধরা পড়ে। আমরা ডিজাইন দেখে কাজ করেছি। কিন্তু এস্টিমেট দেখি নাই। যখন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে কাজ বন্ধ করে দেই। সংশোধিত এস্টিমেট অনুমোদন হয় আসার পরে কাজ শুরু করা যাবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রানলয় অধিদপ্তরের নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল কবির বলেন, বাজেট ও ডিজাইন জটিলতার কারণে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করলে ঢাকা থেকে একটি টিম এসে স্কুলের নির্মাণাধীন ভবন টি পর্যবেক্ষন করে গিয়েছে। আমাদেরকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে নতুন ডিজাইনের কাগজ হাতে পেলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ পুনরায় শুরু করা হবে।