স্থিতিশীল রাজনীতি, স্থিতিশীল অর্থনীতি

সম্পাদকীয় | প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
স্থিতিশীল রাজনীতি, স্থিতিশীল অর্থনীতি

বাংলাদেশ আজ এক বহুমুখী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মুদ্রাস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যাংক খাতের সংকটের মধ্যে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা ব্যবসায়ী মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের আগে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা ও সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কা এ উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। দেশের ইতিহাস বলছে, প্রতিটি নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সরাসরি ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতাই প্রমাণ করে, সহিংসতা ও অবরোধে অর্থনীতির গতি থেমে যায়, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে আসে। বর্তমান পরিস্থিতিতেও একই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগে আস্থাহীনতা দেখা দিচ্ছে, ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অনিচ্ছুক, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে। এর সঙ্গে উচ্চ সুদহার ও তারল্য সংকট নতুন উদ্যোগকে আরও কঠিন করে তুলছে। সাধারণ মানুষও এ প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ৮ শতাংশের বেশি, যা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে ক্ষয় করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে এ চাপ আরও বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে শুধু ব্যবসায়ী বা শিল্পোদ্যোক্তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের কোটি সাধারণ মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বারবার বলছেন-অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পূর্বশর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণেরও বড় অনুষঙ্গ। একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে, বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পারে এবং সবচেয়ে বড় কথা-অর্থনীতিকে স্থবিরতা থেকে বের করে আনতে পারে। অতএব, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন জরুরি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং আস্থা ও সমঝোতার নতুন অধ্যায় লিখতে হবে। আন্দোলন ও কর্মসূচি এমন হতে হবে, যা জনজীবনকে জিম্মি না করে বরং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি শক্তিশালী করে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের অংশ, কিন্তু সেটি সহনশীলতার ভেতরে থেকে পরিচালিত হওয়া চাই। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান নির্ভর করছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। নতুন বিনিয়োগ, শিল্প পুনরুজ্জীবন ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে একটি নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন, যার প্রতি ব্যবসায়ী ও জনগণের আস্থা থাকবে। রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে প্রত্যাশা-সব রাজনৈতিক দল দায়িত্বশীল হবে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে অস্থিরতার হাত থেকে রক্ষা করবে।