রাজশাহীর শীতও উষ্ণ হচ্ছে: নগর পরিকল্পনায় নতুন ভাবনার সময়

সম্পাদকীয় | প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০৩ পিএম
রাজশাহীর শীতও উষ্ণ হচ্ছে: নগর পরিকল্পনায় নতুন ভাবনার সময়

রাজশাহীর শীত একসময় দেশের আরামদায়ক ঋতুগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গত তিন দশকে শীতকালীন ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২.৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, কিছু এলাকায় এই বৃদ্ধি ৪ ডিগ্রিরও বেশি। জাতিসংঘের জলবায়ু প্যানেলের নির্দেশক অনুযায়ী বৈশ্বিক হারে যেখানে প্রতি দশকে সর্বোচ্চ ০.২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কথা, সেখানে রাজশাহীর হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি। মূল কারণ সুস্পষ্ট-অপরিকল্পিত নগরায়ণ। গবেষণা বলছে, গত তিন দশকে শহরের সবুজ এলাকা কমেছে ২৬ শতাংশ এবং জলাধার কমেছে ৩ শতাংশ। বিপরীতে অবকাঠামো বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকৃতির প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাগুলো হারিয়ে কংক্রিটের দখলে চলে গেছে নগরী। ফলাফল-তীব্র পরিবেশগত চাপ, অস্বস্তিকর তাপমাত্রা এবং দীর্ঘমেয়াদি বাসযোগ্যতার সংকট। শহরের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রার চাপ সবচেয়ে বেশি। এগুলো একসময় বাগান ও পুকুরে ভরা এলাকা ছিল, এখন সেখানে ঘন ভবন ও কংক্রিটের দেয়াল। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা নভেম্বর মাসেও গরম অনুভব করছেন-যা এই পরিবর্তনের সরাসরি প্রমাণ। প্রশ্ন হচ্ছে, নগর পরিকল্পনায় আমরা এতদিন কী করেছি? শহরকে কেবল ভবন আর সড়ক দিয়ে সাজানোকে উন্নয়ন মনে করলে পরিবেশের ভারসাম্য ভেঙে পড়বেই। প্রকৃত উন্নয়ন মানে হলো নাগরিকের আরাম, স্বাস্থ্য ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এই বিষয়গুলোকে প্রায় উপেক্ষা করা হয়েছে। গবেষকরা যথার্থই পরামর্শ দিয়েছেন-বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি, জলাশয় পুনরুদ্ধার, তাপ প্রতিরোধী অবকাঠামো ব্যবহার এবং নগর পরিকল্পনায় তাপ-আরামের মানদণ্ড যুক্ত করতে হবে। শুধু রাজশাহী নয়, দেশের সব বড় শহরের জন্যই এগুলো এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহীর অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। ঢাকাসহ অন্যান্য শহরেও একই প্রবণতা চলছে-সবুজ হারাচ্ছে, জলাশয় ভরাট হচ্ছে, আর তাপমাত্রা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। তাই এখনই জলবায়ু সংবেদনশীল নগর পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে শুধু আরামের সংকট নয়, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিও ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে। নগরায়ণ অনিবার্য, তবে সেটিকে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা জরুরি। সবুজ ও জলাশয় ফিরিয়ে এনে, সচেতন পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে শহরকে আবার বাসযোগ্য করা সম্ভব। এখনই সেই পথে হাঁটার সময়।