সারা দেশে গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে শতভাগ এজলাস স্থাপন করা হবে

এফএনএস (আমিনুল হক সাদি; কিশোরগঞ্জ) : | প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
সারা দেশে গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে শতভাগ এজলাস স্থাপন করা হবে

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্পের আয়োজনে বাংলাদেশে গ্রাম আদালত কার্যক্রমের বার্ষিক অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  শনিবার জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আয়োজিত সভায় প্রধান অথিতি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সুরাইয়া আখতার জাহান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজিয়া খান। সভা সঞ্চারনা করেন মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), স্থানীয় সরকার, কিশোরগঞ্জ।

অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাতীয় প্রকল্প পরিচালক বলেন,সালিশী বোর্ড থেকে আজ এ পর্যন্ত গ্রাম আদালত এর অবস্থান। যে বিষয়গুলো গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সমাধান যোগ্য সেগুলো গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। যদি গ্রাম আদালত কে অবমাননা করেন তাহলে ১০০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সারা দেশে শতভাগ এজলাস স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে। গ্রাম আদালতের নথিপত্র নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে নতুবা কাজের অগ্রগতি প্রকাশ পাবেনা। যে কোন দিন আদালত পরিচালনা করা যাবে, তবে খেয়াল রাখতে হবে, যারা সরকারী চাকুরী করে তাদের যেন বন্ধের দিনগুলো নষ্ট না হয়। যে সকল ইউনিয়ন পরিষদ ভবন স্থাপনের জন্য মাটি পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রাম আদালতকে স্থায়িত্বশীল করার জন্য ১০ টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবর ২০২৫ মাসের মধ্যে সকল ইউপি 'তে সরকারী ভাবে ফর্ম ও রেজিষ্টার প্রদান করা হবে। গ্রাম আদালতে অগ্রগতি যাচাই করে সারা বাংলাদেশ ব্যাপী সম্মাননা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্যকালে বলেন,১৯৭৬ সাল থেকে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। এই ব্যবস্থাকে আরো কার্যকরী করার জন্য ২০২৬ সালে আইনটি কার্যকরী হয়। গ্রাম আদালতে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মামলা গ্রহণ করা যায়, সাধারণ জনগণ যাতে আস্থার সাথে সঠিক সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। যে ইউপিগুলোতে এজলাস এবং ভবন নাই সেগুলো নিশ্চিত করতে হবে। ২৫ শতাংশ জায়গা প্রয়োজন নতুন ভবন তৈরির জন্য যার দাম অনেক বেশি, এক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। গ্রাম আদালতের মামলার নথি হালনাগাদ রাখতে হবে। সঠিক ভাবে গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য চেয়ারম্যানগণদের প্রশিক্ষণ প্রদান জরুরী। যে সকল ইউপি গ্রাম আদালত পরিচালনায় এগিয়ে আছে তাদেরকে বাছাই পূর্বক ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারী ইউনিয়ন পরিষদকে পুরুষ্কারের ব্যবস্থা করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। জাতীয় পর্যায় থেকে ছাড় পত্র পেলে অতি দ্রুত হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরদের নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন।

বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্প, ইপসা, কিশোরগঞ্জ জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও জেলার জুলাই ২০২৪- জুন ২০২৫ গ্রাম আদালতের কার্যক্রমের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জসমূহ এবং শিক্ষণীয় দিকসমূহ পর্যালোচনা এবং করণীয় বিষয়ে দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। বিগত ০১ বছরে ১৬১৬ জন আবেদনকারী গ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেন, ১৪১৯ টি মামলা নিষ্পত্তি হয় এবং রায় বাস্তবায়ন হয় ১৩৬৬ টি। ৩০৫ জন নারী আবেদনকারীর মধ্যে ২৯৬ জন নারী গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিচার পেয়েছে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন,বিভাষ চক্রবর্তী, জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক, বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্প, ইউএনডিপি বাংলাদেশ। তিনি বলেন-সারা বাংলাদেশে সকল ইউনিয়ন পরিষদে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণ ইউপিগুলো প্রশাসনের মাধ্যমে সচল করতে হবে এবং জেলা ও উপজেলা গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং জেলা রির্সোস টিমের সদস্যগণের মাধ্যমে স্থায়িত্বশীল করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালতের জন্য ডেস্ক তৈরি হবে। ইউপি-এর কাজের অগ্রগতি কতটুকু বা আমাদের অবস্থান কোথায় আমরা তা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছি। আমাদের সক্ষমতা প্রয়োগ করে কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধি করতে হবে।

অতিরিক্ত পুলশ সুপার মুকিত সরকার বলেন- গ্রাম আদালতে বিচারযোগ্য বিষয় নির্ধারন করা আছে। জনগণের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে আদালতে ও থানায় মামলার জট কমবে। ইউনিয়ন পরিষদ ও বীট পুলিশিং এর মধ্যে একটি সমন্বয় স্থাপন করে কাজ করলে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে মামলা পরিমান বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারন মানুষের ভোগান্তি কমবে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করা হবে।

সভায় মামলার অগ্রগতি যাচাই করে ৩ জন ইউপি চেয়ারম্যানকে পুরুষ্কৃত করা হয়েছে। ১ম স্থান অধিকারী- পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ, অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, ২য় স্থান অধিকারী- দেহুন্দা ইউনিয়ন পরিষদ, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ। ৩য় স্থান অধিকারী- কাদিরজঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদ, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলশ সুপার তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, উপপরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, উপপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যানগণ। মোঃ শাহাদাত হোসেন, প্রজেক্ট এনালিস্ট, সুমন ফ্রান্সিস গোমেজ, কমিউনিকেশনস ও আউটরীচ এনালিষ্ট, ইউএনডিপি বাংলাদেশ। উপস্থিত ছিলেন  ফারহানা ইদ্রিস, প্রকল্প সমন্বয়কারী, ইপসা, এভিসিবি-৩ প্রকল্প। এছাড়াও বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারীগণ। 


আপনার জেলার সংবাদ পড়তে