খাগড়াছড়ি জেলায় টানা তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি চলছে, এর মধ্যে গুইমারা উপজেলায় সহিংসতায় তিনজন নিহত হয়েছেন। প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা বহাল থাকলেও জেলার পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি এখনো চলমান। জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে জেলার সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙাসহ নয় উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবা ছাড়া কোনো পরিবহন সড়কে নামতে পারছে না।
এ অবস্থায় জেলার সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। পর্যটকরা আটকা পড়েছেন খাগড়াছড়ি শহরে। সাজেকসহ অন্যান্য পর্যটন এলাকায় যেতে পারছেন না তারা। শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে পৌঁছানো নারায়ণগঞ্জের পর্যটক মো. কামাল হোসেন বলেন, “আমরা ২৩ জন এখানে এসে আটকা পড়েছি। অবরোধের কারণে ফিরতেও পারছি না।”
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) গুইমারায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। সহিংসতায় মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য ও গুইমারা থানার ওসিসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। নিহতদের মরদেহ খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, পুলিশি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্ত করা হবে।
২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর জেরে হামলা-পাল্টা হামলায় বেশ কিছু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। ধর্ষণ মামলার সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হলেও অন্য দুজন এখনো পলাতক।
অবরোধের কারণে জেলার বাজারগুলোতে কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শহরের প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা, মানুষের চলাচলও কমে গেছে।
এদিকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে টহল জোরদার করেছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
অবরোধ শিথিলের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি। রোববার রাতে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক তমাল দাশ লিটন দুর্গাপূজার সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে সিঙ্গিনালা ধর্ষণ ঘটনার প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তারা।
বর্তমানে পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের আশা, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে।