ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় কাতরাচ্ছে রিমা আক্তার (২৩)। প্রায় দশ বছর ধরে ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছে সে। রিমার অভিযোগ, পরিবারের অবহেলায় একাই হাসপাতালে ভর্তি হলেও বাবা- সৎ মা কেউই তার খোঁজ নেননি। বরং অভিশাপ দিয়েছে এবং বাড়িতে না ফিরতে বলেছে।
এদিকে এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। খবর পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরও পাশে দাঁড়ায়।
রিমা আক্তার নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের বারৈকান্দি গ্রামের শাকিল আহমেদ শরিফের কন্যা। রিমা’র জন্মের ছয় মাস পর তার মা মমতাজ বেগম মৃত্যুবরণ করেণ। তবে এর পাঁচ মাস আগেই শাকিল আহমেদ হাজেরা খাতুন নামের একজনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর সৎ মা হাজেরার কাছেই বেড়ে ওঠে রিমা।
পরে রিমা অল্প বয়সেই নিজের পছন্দে বিয়ে করলেও দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার কারণে সংসার ভেঙে যায়। বাধ্য হয়ে পূনরায় বাবার বাড়িতে ফিরে আসে সে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সে একাই হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এদিকে, রিমার বাবা শাকিল আহমেদ শরিফ নিজেকে ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য দাবি করেন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে কেউ কেউ বলছেন নিজ সন্তানের খোঁজ নিতে না পারা ব্যক্তি কিভাবে জনগণের সেবা করবেন ? তবে সোমবার বিকেলে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শাকিল আহমেদ শরিফ বিএনপি বা তার অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে লিখিতভাবে জড়িত নন।
বাবা শাকিল আহমেদের দাবি, মেয়ে রিমার অভিযোগ মিথ্যা। তিনি মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছেন,তার প্রমানও দেখিয়েছেন। চারদিন আগে কাউকে না জানিয়ে রিমা বাড়ি থেকে চলে যায়। পরে ফোনে জানতে পারেন, সে ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি।
সৎ মা হাজেরা খাতুনও একই দাবি করেন। তার ভাষ্য, রিমার মা ছিলেন তার খালাতো বোন। মা মারা যাওয়ার পর তিনিই রিমাকে লালন-পালন করেছেন। এখন হঠাৎ রিমা এসব বলছে, কি অপরাধ এর কারণ তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.ফয়সাল আহমেদ জানান, রিমা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এসব রোগীদের আজীবন ইনসুলিন নিতে হয়। ভর্তি হওয়ার সময় তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছিলনা, শরীরে সংক্রমণও ছিল। বর্তমানে হাসপাতাল থেকেই তার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেহেতু তার অভিভাবক পাশে নেই।
সমাজসেবা কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারা নিতে না চাইলে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
সংবাদ পাওয়ার পর দুর্গাপুর কলমাকান্দার বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে রিমার পাশে দাড়িয়েছেন। তাছাড়া সংবাদকর্মীসহ সেচ্ছাসেবী ব্যাক্তিরাও পাশে দাড়ানোর খবর পাওয়াগেছে।