কীটনাশকের ব্যবহার বাড়লেও আমদানি নির্ভরতায় বাড়ছে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয়

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:১২ এএম
কীটনাশকের ব্যবহার বাড়লেও আমদানি নির্ভরতায় বাড়ছে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয়

দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে কীটনাশকের ব্যবহারও। কৃষিনির্ভর দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশকে চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই কীটনাশক আমদানি করতে হয়। গত পাঁচ দশকে দেশে কৃষি উৎপাদনে প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে কীটনাশকের ব্যবহার। কিন্তু আমদানি নির্ভরতায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে কীটনাশক বাবদ কৃষকের খরচ বাড়ছে। তাতে বেড়ে যাচ্ছে কৃষির উৎপাদন ব্যয়ও। অথচ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রপ্তানি করছে। উচ্চ প্রযুক্তির ওষুধ উৎপাদন করে রপ্তানি করলেও অপেক্ষাকৃত সহজ প্রযুক্তির কীটনাশক উৎপাদনে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে ওই খাতটি এখনো আমদানিনির্ভর। কীটনাশকের কাঁচামাল আমদানিতে কঠিন শর্তের কারণে কীটনাশক উৎপাদন কম। বরং উৎপাদনের চেয়ে আমদানি অনেক সহজ। তবে স্থানীয়ভাবে কীটনাশকের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নীতিসহায়তা পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে কৃষিপণ্য উৎপাদনে মোট উপকরণ ব্যয়ের ২০ থেকে ২২ শতাংশ কীটনাশকের পেছনে খরচ হয়। কারণ কীটনাশকের আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার ৫ শতাংশ। আর কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে চাহিদার বড় অংশই পূরণ করা হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে দেশে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ হাজার টন। বর্তমানে তা বেড়ে ৪০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৯৯৭ সালেও দেশে কীটনাশকের ব্যবহার ছিল ১১ হাজার ৩৬৭ টন। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২২ সালে দেশে কীটনাশক আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ২৮৩ টন।

সূত্র জানায়, দেশে কীটনাশক উৎপাদনে বর্তমানে প্রতিযোগিতা ছাড়া নির্দিষ্ট করে দেয়া কিছু দেশ থেকে বেশি দামে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আর আমদানিকারকদের জন্য উৎস উন্মুক্ত থাকায় তারা যেকোনো দেশ থেকে কম দামে কীটনাশক আমদানির সুযোগ পায়। তাছাড়া শুল্কনীতিও বৈষম্যমূলক। চীন থেকে আমদানি করা কীটনাশক ও কীটনাশকের কাঁচামালের মধ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক পার্থক্য আর ভারতে তা ৩০ শতাংশ। দেশীয়ভাবে কীটনাশক উৎপাদন না বাড়ার অন্যতম কারণ কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক। অথচ অনেক বেশি পড়ে আমদানি করা কীটনাশকের দাম। তাতে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। 

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার কীটনাশকের বাজার রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানির হাতেই রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার বাজার। আর চাহিদার ৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকার কীটনাশক আমদানি করছে স্থানীয় আমদানিকারকরা। বর্তমানে দেশে সাত শতাধিক কীটনাশক আমদানিকারক রয়েছে। অথচ বিগত ২০১০ সালেও মাত্র ১৫০টি ছিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। কীটনাশকের আমদানিবান্ধ শুল্কনীতিতে বাড়ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে সংখ্যা। আর দেশে মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠান কীটনাশক স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে।

এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বামা) সভাপতি কে এস মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কীটনাশকের স্থানীয় উৎপাদন শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে বাড়ানো যাচ্ছে না। বাধা দূর করা গেলে কীটনাশকের আমদানি প্রয়োজন হবে না। তাতে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কীটনাশকের দামও কমানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি সহজ হবে কীটনাশকের মান নিয়ন্ত্রণও।

অন্যদিকে কীটনাশকের কাঁচামালের উৎস প্রসঙ্গে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, কীটনাশকের কাঁচামালের উৎস উন্মুক্ত করার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আমদানিনির্ভরতা কমানো প্রয়োজন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে