সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হাসাউড়া সার্বজনীন দেব মন্দিরে দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সুনামগঞ্জ সদর পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ (পিএফজি)। পূজা মণ্ডপে আয়োজন করা হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী সম্প্রীতি সমাবেশ, যেখানে একত্রিত হন হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পূজা কমিটির সভাপতি মিলন তালুকদার, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন পিএফজি সদস্য ও পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কর্ণবাবু দাস। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কুমার পাল।
তিনি বলেন, "আজ হাসাউড়ার পূজামণ্ডপে এসে মনে হচ্ছে যেন নিজের বাড়ির পূজাতেই উপস্থিত হয়েছি। এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সম্প্রীতির এমন দৃশ্য সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায়।"
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই, পিস অ্যাম্বাসেডর সিরাজুল ইসলাম পলাশ, সালেহিন চৌধুরী শুভ, এবং জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক। এছাড়া বক্তব্য রাখেন পিএফজির সদস্য ডেনিস চক্রবর্তী, নুরুল হাসান আতাহের, ও রাসেল আহমদ।
পিএফজির উদ্যোগে সম্প্রীতির এই মিলনমেলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিনিধি ডেনিস চক্রবর্তী। তিনি সাংস্কৃতিক আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে খ্রিস্টান শিশু-কিশোরদের নিয়ে প্রাচীন গারো নৃত্যের পরিবেশনা করেন, যা এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো উপস্থাপিত হয়। নতুন এই পরিবেশনা দেখতে পূজা মণ্ডপে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
সন্ধ্যায় আরতি দিয়ে শুরু হয় সম্প্রীতি সমাবেশের মূল আয়োজন। এরপর রিচির একক নৃত্য পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সমাবেশ শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে তিন ধর্মের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক অন্যরকম মাত্রা দেয়। হিন্দু ধর্মীয় পূজাকে ঘিরে মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে-বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য আজও অটুট। পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ (পিএফজি)-এর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় উদাহরণ হয়ে রইল, যেখানে ধর্ম নয়, মানুষই বড় পরিচয় হয়ে উঠেছে।