সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) এক বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভার গোপন কার্যবিবরণী ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে উঠে এসেছে, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এসএমপির আওতাধীন এলাকায় কোনো আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্যে উপস্থিত থাকবে না, এমন এক নির্দেশনা যা রাজনৈতিক বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।
পুলিশের অভ্যন্তরীণ এই নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনা সাধারণ ঘটনা নয়। সাধারণত প্রশাসনিক গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এসব নথি সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এই নথির একটি অংশের ফাঁস হওয়ার কারণে পুলিশের ভেতরে দলীয় আনুগত্যের প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, নথি ফাঁসে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা কি অভ্যন্তরে এখনও রাজনৈতিক আনুগত্যে বিভক্ত? নতুবা এটি একটি পরিকল্পিত তথ্য ফাঁসের ঘটনা কি না?
ফাঁস হওয়া কার্যবিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে, ডিসি দক্ষিণসহ এসএমপির বিভিন্ন থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে ওই এলাকার আওয়ামী লীগ কার্যক্রম কার্যত অবরুদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে তদারকির দায়িত্ব এসি, এডিসি এবং ডিসিদের দেওয়া হয়েছে। এমন নির্দেশনার অংশ বিশেষই ফাঁস হওয়ায় রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফাঁস হওয়া নথির কপি পাঠানোর সময় ‘উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ)’ নামে টিক চিহ্ন দেয়া হয়েছে, যার কারণে ধারণা করা হচ্ছে এই অফিস থেকেই তথ্যটি ফাঁস হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে, কার হাতে নথিটি ফাঁস হলো, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত চলছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের মধ্যে দলীয় আনুগত্য থেকে এই ধরনের গোপন তথ্য ফাঁস হওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও সংবিধানবিরোধী। সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আশিক উদ্দিন এ ঘটনাকে ‘নাশকতার পর্যায়ে’ পরিগণনা করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু ব্যক্তিগত নয়, সরকারের ভাবমূর্তি এবং জনবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যও অভিপ্রেত।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেন, প্রশাসনিক গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি, এবং দলীয় প্রভাব বিস্তার করে প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা দেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের তথ্য ফাঁস করা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার বক্তব্য এসেছে। এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশ কমিশনারের অফিসিয়াল সভায় মূলত আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, যা ভুলভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। তিনি জানান, পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং যাঁরা এই গোপন নথি ফাঁস করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও সততা নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রশাসনের মধ্যে দলীয় প্রভাব ও রাজনৈতিক আনুগত্যের ছায়া থেকে মুক্ত না হলে দেশের আইনের শাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।