ক্ষেতলালে ইউপি সদস্যের স্ত্রী ও আত্মীয়ের নামে ভিডব্লিউবি নারী উন্নয়ন সহায়তার কার্ড

এফএনএস (মোঃ হাসান আলী মন্ডল; ক্ষেতলাল, জয়পুর হাট) :
| আপডেট: ১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম | প্রকাশ: ১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম
ক্ষেতলালে ইউপি সদস্যের স্ত্রী ও আত্মীয়ের নামে ভিডব্লিউবি নারী উন্নয়ন সহায়তার কার্ড

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে নারী উন্নয়ন সহায়তা ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট ভিডব্লিউবি (পূর্বের নাম ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় নিজের স্ত্রীর নামসহ ২ হালি আত্মীয়ের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। 

জানা যায়, উপজেলার বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির তালিকা যাচাই-বাছাই প্রকৃয়ার সময় প্রতারনা করে ( ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করে) তার স্ত্রী এবং ২ হালি আত্মীয়ের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে । তারা হলেন, ইউপি সদস্য শফিকুলের আপন বড় ভাইয়ের দুই স্ত্রী,২১২ নং মাফুজা খাতুন ও ২৩০ নং সেলিনা খাতুন, অপর ২১০ নং  খোতেজা (মামি) ২১৪ নং রিমা বেগম (চাচি),২১৬ নং আলেয়া বেগম (চাচি), ২১৭নং আমেনা বেগম (চাচি), এবং ১৮২ নং শেফালী বেগম (খালা)।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়,ইউনিয়ন পর্যায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় অসহায় দুস্থ নারীদের প্রতি মাসে বিনা মূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কর্মসূচিতে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়।  বড়তারা ইউনিয়নের প্রায় ১৮শত জন দুস্থপরিবারের নারী আবেদন করেন। 

চলতি বছরের ৩০ জুন ভিডব্লিউবি উপকারভূগী নারী বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব হিসেবে ইউনিয়নের সচিব, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনও'র প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে যাচাই ও লটারি করে পুরো ইউনিয়নের ৪৪০ জনের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়। এর মধ্যে ৫ নং ওয়ার্ডেই ৫৩ জনের নাম চুড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। 

তবে ওই  ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম যাচাই-বাছাই কমিটির সাথে প্রতারনা করে নিজের স্ত্রী ও ২ হালি আত্মীয়ের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই দুস্থ নয়। কারও কারও আবার ৬-৮ বিঘা জমি, পাকা বাড়ি, একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দাবি অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীসহ পল্লী চিকিৎসক ভাগনীর নামও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরে অভিযোগ পাওয়ায় তদন্ত করে নাম দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তাকে অফিসে ডেকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।

তবে তালিকা ঘেটে দেখা যায়, তালিকায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের ভাবি, চাচি, মামি, খালাসহ ২ হালি আত্মীয়ের নাম তালিকায় ঢ়ুকিয়েছে, যাদের অধিকাংশই সাবলম্বী। 

 এনিয়ে বাঘাপাড়া গ্রামের আব্দুর নুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শফিকুল মেম্বার একজন দুর্নীতিবাজ লোক। গরীব মানুষজনকে এসব সরকারি সুযোগ সুবিধা না দিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনকে দিচ্ছে। আমরা তার বিচার চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নিজস্বভাবে তদন্ত করে তালিকা করেছে। এবারে আমাদের কোনো হাত নেই।

বড়তারা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহযোগিতায় যাচাই-বাছাই ও লটারির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও সাবলম্বী পরিবারের লোকজন তালিকাভুক্তির অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরিন জানায়, যেসব উপকারভোগী সচ্ছল ও সম্পদশালী হয়েও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আল জিনাত বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী তালিকা করা হয়েছে। কোথাও এর ব্যত্যয় হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে