হাটহাজারীতে শুভ প্রবারনা পূর্ণিমা আগামী ৬ অক্টোবর

এফএনএস (কেশব কুমার বড়ুয়া; হাটহাজারী, চট্টগ্রাম) : | প্রকাশ: ২ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
হাটহাজারীতে শুভ প্রবারনা পূর্ণিমা আগামী ৬ অক্টোবর

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে  বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারনা পূর্ণিমা তথা ফানুস উড়ানো উৎসব আগামী সোমবার( ৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দির / বিহারে দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ব্যাপী ভিক্ষু সংঘের বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান ও গৃহী সংঘের আমাবস্যা,  অষ্টমী ও বিভিন্ন পূর্ণিমা তিথিতে উপসথ শীল গ্রহন, বিদর্শন সাধনা অধিষ্ঠান শেষে এই প্রবারনা পূর্ণিমা তথা আশ্বিনী পূর্ণিমা উৎসব  অনুষ্ঠিত হয়। এই পূর্ণিমাকে অনেকে ফানুস উড়ানো উৎসব ও বলে থাকে।  এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু তথা ভিক্ষু সংঘের বর্ষাব্রত অধিষ্ঠানের সমাপনী দিন।পরদিন থেকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা মহাকারুনিক বুদ্ধ কর্তৃক বহুজনের হিত সুখের জন্য  ভিক্ষু সংঘকে ধর্ম প্রচারের প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসারে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে, বিশেষ করে যেসব বিহারে ভিক্ষু সংঘ বর্ষাব্রত অধিস্ঠান করেছিল সেই সব বিহারে দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান সভায় গিয়ে গিয়ে গৃহী সংঘকে ধর্ম উপদেশ প্রদান করা হয়ে থাকে। এই ধর্মীয় উৎসব মহাসমারোহে ভাবগম্ভীর পরিবেশে  উদযাপনের জন্য চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আওতাধীন আটটি বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী অধ্যূষিত ১৩ টি  বৌদ্ধ বিহার তথা মন্দিরে  দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোরে পবিত্র ত্রিপিটকের মঙ্গলবানী পাঠ, সমবেত বুদ্ধ বন্দনা, জাতীয়, ধর্মীয় ও স্ব স্ব সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল ও উপসথ শীল গ্রহন, ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, অন্ন ও পুষ্প মেরু দাস, বৈজন্তিক ধ্বজ্বা উত্তোলন ও উৎসর্গ,  উপসথ শীলধারীদের মধ্যহৃভোজ গ্রহন, প্রবারনা পূর্ণিমার তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান, আলোক সজ্জা,  বুদ্ধ কীর্তন,  সন্ধ্যা কালীন প্রদীপ পূজা, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং জীব জগতের মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও সর্বশেষে ফানুস উড়ানো মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি সমাপ্তি ঘটবে। উপজেলা আওতাধীন পশ্চিম ধলই উদালিয়া শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার,  মির্জাপুর শান্তিধাম বিহার, মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহার, বালুখালী জগৎ জোতি বৌদ্ধ বিহার, গুমানমর্দ্দন ধর্মচক্র বিহার, আরিয়া ওয়াংচা আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, গুমানমর্দ্দন সার্বজনীন নালন্দা বিহার,গুমানমর্দ্দন শান্তি বিহার, রুদ্রপুর ধর্মরত্ন বিহার, মীরেরখীল চন্দ্রপুর বেনুবন বিহার, জোবরা সুগত বিহার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্ংলগ্ন বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা, মধ্যম মার্দাশা সার্বজনীন শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহারে প্রবারনা  পূর্ণিমা উপলক্ষে দিনব্যাপী  পৃথক কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। উল্লেখিত বিহার সমূহে প্রবারনা পূর্ণিমা তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভায় স্ব স্ব বিহারের অধ্যক্ষ গন সভাপতিত্ব করবেন । দিনের সর্বশেষ আকর্ষণ ফানুস উত্তোলন। 

ফানুস উড়ানোর বিষয় কথিত আছে , আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে রাজকুমার সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ) দুঃখমুক্তি লাভের আশায় রাজ্য, রাজত্ব, ভোগ-বিলাস, ধন-সম্পদ, সংসার সবকিছু ত্যাগ করে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। এ সময় ভাবলেন, ‘আমি এখন সন্ন্যাসী, রাজকীয় এ বাহারি চুল আমার কিবা প্রয়োজন। তাই তরবারি দিয়ে নিজের চুলের গোছা নিজেই কেটে নিলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, যদি আমার মধ্যে বুদ্ধ হওয়ার মতো পারমী থাকে তাহলে এই চুলের গুচ্ছ মাটিতে পড়বে না, আকাশেই স্থিত থাকবে। এই সংকল্প করে চুলের গোছা ওপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন রাজকুমার। আশ্চর্যের বিষয় একটি চুলও মাটিতে পড়ল না। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, স্বর্গের ইন্দ্ররাজা এই চুলগুলো হীরা, মণিমাণিক্য খচিত স্বর্ণপাত্রে ধারণ করে, এ চুলকে কেশ ধাতু হিসেবে স্থাপন করে তাবতিংস স্বর্গে একটি চৈত্য নির্মাণ করেন এবং এই চৈত্যের নাম রাখা হয় চুলামনি চৈত্য। সেই বিশ্বাস থেকে বৌদ্ধরা স্বর্গের সেই চুলামনি চৈত্যকে পূজা করার উদ্দেশে আকাশে ফানুস বা আকাশ প্রদীপ উত্তোলন করেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে