লাখ লাখ ডাইভিং লাইসেন্স ঝুলে থাকায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:২৯ এএম
লাখ লাখ ডাইভিং লাইসেন্স ঝুলে থাকায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

ঝুলে আছে লাখ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স। দেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) লাইসেন্স প্রিন্টিংয়ের জন্য নতুন ঠিকাদার খুঁজছে। বর্তমানে সোয়া সাত লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং অবস্থায় আছে। আর প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজারে মতো নতুন করে আবেদন পড়ে। কিন্তু নিয়মিত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে পেন্ডিং লাইসেন্সের সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, নতুন ঠিকাদার নিয়োগের পরও পেন্ডিং লাইসেন্সের পরিমাণ সহসাই কমবে না। তাতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে বিদেশগামী কর্মী ও সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এতোদিন গ্রাহকদের বিআরটিএ’র হয়ে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড (এমএসপি) ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট করে দিতো। কিন্তু জুলাই মাসে শেষ হয় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিআরটিএর চুক্তির মেয়াদ। তারপর নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিতে কয়েক মাস লাগতে পারে। আর নতুন ঠিকাদার না আসা পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংকটও দূর হবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্সের এ সংকটের জন্য ভুক্তভোগীরা বিআরটিএর দায়ী করছেন। তাদের মতে, পুরনো ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন ছিলো। যাতে পুরনো ঠিকাদার যেদিন চলে যাবে, সেদিন থেকেই নতুন ঠিকাদার দায়িত্ব নিতে পারে। কিন্তু বিআরটিএ ব্যর্থ হওয়ায় হয়রানির মধ্যে পড়েছেন লাখ লাখ গ্রাহক।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১১ সাল থেকে জাল, অবৈধ ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠেকাতে বিআরটিএইলেকট্রনিক চিপযুক্ত স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করে। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বিভিন্ন সময় বিআরটিএর হয়ে ওই কার্ড প্রিন্ট করে দিয়েছে। আর সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ভারতের মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং কাজের ঠিকাদার ছিলো। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ কার্ড প্রিন্ট করে দেয়ার চুক্তি হয়েছিলো। চুক্তিমূল্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও চুক্তির মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি ৩৩ লাখ কার্ড প্রিন্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিংয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, তাতে ১৩ অক্টোবর দরপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ উলে­খ করা হয়েছে। তারপর দরপত্র যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়ন করা হবে। সব কাজ শেষ করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। যদিও কার্ড প্রিন্টিংয়ের জন্য শুরুতে একটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকে নিযুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে না গিয়ে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে নিযুক্ত করার কথা ছিল। তবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তে ওই পরিকল্পনা বাতিল করে দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়ায় বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সম্প্রতি  সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক সভায় চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ২৪ লাখ ৭৬ হাজার ২৩৫টি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং করা হয়েছে। বর্তমানে ৭ লাখ ২৪ হাজার ৫৮টি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং রয়েছে। ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কার্যক্রম চলমান থাকায় জরুরি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর নিয়মিতভাবে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে।