রাস্তার ধারের টক-ঝাল-মিষ্টি স্বাদের কতবেল

এফএনএস (মোর্শেদুল ইসলাম শাজু; হোমনা, কুমিল্লা) : | প্রকাশ: ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
রাস্তার ধারের টক-ঝাল-মিষ্টি স্বাদের কতবেল

কুমিল্লার হোমনাসহ দেশের বিভিন্ন শহর-গ্রামের সড়কের ধারে সহজেই চোখে পড়ে ঝুড়িভর্তি কতবেল। সেসব ঝুড়ির পাশে বসে পরিশ্রমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট বাঁশের কাঠি কেটে, ফল সাজিয়ে তৈরি করছেন টক-ঝাল-মিষ্টি স্বাদের জিভে জল তোলা মজাদার চাটনি। 

এই ব্যবসা একদিকে মানুষের রসনার তৃপ্তি জোগায়, অন্যদিকে অনেক পরিবারকে এনে দেয় জীবিকার ভরসা। প্রথমে ব্যবসায়ীরা কতবেলের বোঁটার দিকের শক্ত খোল ভেঙে নেন। তারপর ভেতরে বিশেষ ধরনের লোহার দণ্ড ঢ়ুকিয়ে চারদিকে ঘুরাতে থাকেন। এতে ভেতরের শাস নরম হয়ে আচারের মতো হয়ে যায়। এরপর তাতে মেশানো হয় লবণ, লাল মরিচের গুঁড়া, কাঁচামরিচ, কখনও চিনি বা গোলমরিচের গুঁড়া। 

পরে টক, ঝাল ও মিষ্টির স্বাদের কতবেল ছোট ছোট কাঠির সাহায্যে পরিবেশন করা হয় গ্রাহকদের।  ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারি মোকাম থেকে বস্তা দরে কতবেল কিনে আনেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে তারা সেগুলো ছোট-বড়, কাঁচা, পাকা, কয়েক ধাপে বাছাই করেন। তা থেকে খাবারের উপযোগী বিবেচনায় আলাদা আলাদা ঝুড়িতে করে সেই ফল তারা প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি বাজার, শপিং মল ও স্কুল-কলেজের আশেপাশে খুচরা বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে বসেন। 

উপজেলা সদরের শিবালয় মার্কেটের সামনের খালি জায়গায় বসে প্রতিদিন মৌসুমী ফল বিক্রি করেন জগদিশ, কফিল উদ্দিন গার্লস স্কুল মার্কেটের সামনে মিলন, মমিন ও থানা রোডের টিন দোকানের সামনের খালি জায়গায় মোস্তফা। তারা জানান- প্রতি বস্তা কতবেল ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় কিনতে হয়। প্রতি বস্তায় দুইশ থেকে আড়াই শ’ পিস কতবেল থাকে। মৌসুমভেদে একেকটি কতবেল ২০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়। এর মধ্যে পরিবহন খরচ, প্রতিদিনই কিছু না কিছু ফল পচে নষ্ট হয়ে ঘাটতি যায়। এসব বাদ দিয়ে প্রতিদিন হাজার টাকার বেশি আয় হয়। 

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে পথচারী সবার কাছেই চাটনি করা কতবেল  সমান আকর্ষণীয়। 

ক্রেতা মো. খাজা, জসিম উদ্দিন ও রোকসানা আক্তার জানান, গরমে ঠান্ডা পানি পান করে যেমন তৃষ্ণা মিটে, তেমনি কতবেলের এই টক-ঝাল স্বাদেও ক্লান্তি দূর হয়। এ ব্যবসাটি রাস্তার ধারে হওয়ায় পরিবেশগত কারণে অনেক সময় স্বাস্থ্যঝুঁকির অভিযোগ রয়েছে। তারপরও ক্রেতাদের ভিড় থাকে। 

ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভালো মানের কতবেলটিই পরিবেশনের চেষ্টা করেন। মৌসুমভিত্তিক এ ব্যবসা গ্রীষ্ম ও বর্ষায় সবচেয়ে বেশি চলে, শীতকালে চাহিদা কিছুটা কমে আসে। কতবেল কেবল একটি মৌসুমি ফল নয়; এটি ঘিরে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা। যা নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে ভরসা জুগিয়েছে এবং পথচারীদের জন্য সহজলভ্য স্বাদের আনন্দ বয়ে আনছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে