প্রবল বৃষ্টিতে নেপালে পাহাড় ধস ও বন্যায় অন্তত ৪৭ জনের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
| আপডেট: ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম | প্রকাশ: ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
প্রবল বৃষ্টিতে নেপালে পাহাড় ধস ও বন্যায় অন্তত ৪৭ জনের মৃত্যু

নেপালে টানা ভারি বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড় ধস ও আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে সড়ক ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও রয়টার্স জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতের সীমান্তঘেঁষা পূর্বাঞ্চলীয় ইলাম জেলার বাসিন্দা।

সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র কালিদাস ধৌবোজি রোববার (৫ অক্টোবর) জানান, ইলাম জেলায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় অন্তত ৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে আরও ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র শান্তি মহাত বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে সেনা ও পুলিশের যৌথ অভিযান চলছে। তবে টানা বর্ষণে উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার (৬ অক্টোবর) ও মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সারাদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে জরুরি সেবা ও উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো এই ছুটির আওতায় থাকবে না। সরকার বলেছে, আরও ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় এই বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর অন্তত ১২টি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। বিভাগের প্রধান কমল রাম জোশি নাগরিকদের নদীতীরবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্থানীয় দৈনিক দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, বাগমতী, গণ্ডকি, লুম্বিনি ও মদেশ প্রদেশে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে। রাজধানী কাঠমান্ডুর কিছু অংশেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

পাহাড় ধসে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কাঠমান্ডু-চীন সীমান্ত সংযোগকারী আরণিকো মহাসড়কের একাধিক অংশ ধসে পড়েছে। পূর্বাঞ্চলের বিপি মহাসড়ক ধ্বংসস্তূপে ঢেকে গেছে, ফলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

খারাপ আবহাওয়ার কারণে শনিবার (৪ অক্টোবর) সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সীমিত আকারে চালু থাকলেও বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের মুখপাত্র রিঞ্জি শেরপা।


এ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এসেছে এমন এক সময়ে, যখন লাখ লাখ মানুষ দশাইন উৎসব শেষে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরছিলেন। দুই সপ্তাহব্যাপী এই ধর্মীয় উৎসবের প্রধান দিন ছিল বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর), যেদিন মানুষ গ্রামে পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হন।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব নেপালের কোসি নদীতে। স্থানীয় কর্মকর্তা ধর্মেন্দ্র কুমার মিশ্র জানান, নদীর পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় কোসি ব্যারাজের সব ৫৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ১০ থেকে ১২টি গেট খোলা হয়। কর্তৃপক্ষ সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল সীমিত করার কথাও বিবেচনা করছে।

এই নদী প্রতিবছর ভারতের বিহার রাজ্যে ভয়াবহ বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং এলাকায় টানা বৃষ্টিতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও রয়টার্স জানিয়েছে।

নেপালে বর্ষা মৌসুম সাধারণত জুনের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির কারণে প্রতি বছরই বর্ষাকালে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে।