গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের নতুন করে আরও পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছে। এনিয়ে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাড়াল ১৬ জনে। গত ১ অক্টোবর হতে ৪ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ১২ জন। এদের মধ্যে এক নারী রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। বাকী ৪ জন গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও রাবেয়া ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে সর্বানন্দ ও তারাপুর ইউনিয়নবাসী বলছেন তাদের ইউনিয়নে অন্তত ১০ জন অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে কসাইদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে এখন গরু-ছাগলের মাংস কিনছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রোববার নতুন করে আর কোন অ্যানথ্রাক্স রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসে নাই। গত ১ অক্টোবর হতে ৪ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা হলেন- মধ্যে বেলকা গ্রামের সামিউল ইসলাম, সাহাদৎ হোসেন, সবুজ মিয়া, বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আজিজল হক, পশ্চিম বেলকা গ্রামের ভূট্ট মিয়া, আতিকুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, বেলকা গ্রামের মোজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, খতিব মিয়া, ফরিদুল হক, রুজিনা বেগম, কিসামত সদর গ্রামের মোজা মিয়া, মাহবুর রহমান, শাফিকুল ইসলাম, স্বাধীন মিয়া। এদের মধ্যে রুজিনা বেগম, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং মোজা মিয়া, শাফিকুল ইসলাম, মাহবুর রহমান ও স্বাধীন মিয়া গাইবান্ধায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সুন্দরগঞ্জ বাজারের বিসমিল্লাহ ফ্রেস মিড হাউজের প্রোপাইটার মো. নয়া মিয়া বলেন, অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কের পর গত এক সপ্তাহ থেকে গরুর মাংস বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। শুধূমাত্র অনুষ্ঠান বাড়ীতে মাংস নিচ্ছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে গরু জবাই করা হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলা জেলা শহরের ৭টি মাংসের দোকানে প্রতিদিন ৩ হতে ৪ টির গরু জবাই হচ্ছে। এর আগে প্রতিদিন ৭ হতে ১০টি গরু জবাই হত।
গত ৫ অক্টোবর রংপুর বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডাক্তার মো. আব্দুল হাই সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে দুইটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ৬ জনের এই মনিটরিং টিম সুন্দরগঞ্জের পনের ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তদারকি করবেন। অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরে পক্ষ হতে মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক করছেন। তারা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত পশু পরিচর্যা করলে বা সেই পশশু জবাই করে মাংস কাটাকাটি করলে মানুষের মাঝেও অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে কারনে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গবাদি পশু কোন অবস্থাতেই জবাই করা যাবে না। হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে আক্রান্ত পশুর পরিচর্যা করতে হবে এবং মৃত্যুর পরেই পশুকে তাৎক্ষনিকভাবে মাটির নিচে পুতে রাখতে হবে।
উপজেলা প্রাণি অফিসার বিল্পব কুমার দে বলেন, রোববার বিকাল পর্যন্ত নতুন করে গরু-ছাগল মারা যাওয়া তথ্য পাওয়া যায়নি। অ্যানত্রাক্স নিয়ে গঠিত বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের টিম মাঠে কাজ করছেন। ভ্যাকসিন অব্যাহত রয়েছে। কসাইখানা গুলোতে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে গরু-ছাগল করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার দিবাকর বসাক বলেন, রোববার নতুন করে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে নাই। এ পর্যন্ত ১২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন এবং একজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রার্দুভাব নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। তারাও এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করছেন।