উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে। রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়, যা উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক করে তুলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিস্তার পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। রাত নয়টার দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৪৪ মিটার, অর্থাৎ বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে। পানির এই দ্রুত বৃদ্ধি মোকাবিলায় ব্যারেজ এলাকার ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
উজানের ভারী বর্ষণ ও ঢল নামায় নদী তীরবর্তী চার উপজেলা—লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী সংলগ্ন চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।
পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন নদী তীরবর্তী মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে মাইকিং করছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানিয়েছেন, আকস্মিক পানি বৃদ্ধি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে।”
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ৬ অক্টোবর সকাল ৯টার মধ্যে দেশের ভেতরে ও উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে, ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শায়খুল আরিফিন জানিয়েছেন, বর্তমানে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে রোপা আমন, চিনাবাদাম ও বিভিন্ন শাকসবজির চাষ চলছে। যদি পানি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তবে এক-দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস সড়ক এলাকাও হুমকির মুখে পড়েছে। পানির প্রবল স্রোতে সেখানে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেক পরিবার ইতোমধ্যে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, “উজানে অতিবৃষ্টি ও ঢল নামায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আমরা সব দরজা খুলে দিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষকে অগ্রিম সতর্ক করা হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। কারণ সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে, যা নতুন ঢল তৈরি করে তিস্তার পানির চাপ আরও বাড়াতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের তিস্তাপাড়বাসী এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পানির ভয়ে। ফসল, ঘরবাড়ি ও পশুপাখি রক্ষায় তারা স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুল ভবনে নিরাপদে অবস্থান নিচ্ছেন।