বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় ও শেষ পর্বটি—বিবিসি বাংলা জানিয়েছে—মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রচারিত হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি অন্তর্বর্তী সরকার, সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ কূটনীতিসহ নানা বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
তারেক রহমান সাক্ষাৎকারে বলেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সেটি যে সংস্কারগুলো অনিবার্য তা সম্পন্ন করে স্বাভাবিক, সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচন নিশ্চিত করবে; তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সরকার নিজের দায়িত্ব সৎভাবে পালন করবে। তিনি উল্লেখ করেন যে সরকারের কাজের গুণের ওপরই রাজনৈতিক সম্পর্কের উষ্ণতা-শীতলতা নির্ভর করবে এবং রোডম্যাপ ও নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্টতা না থাকায় জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল, যা পরে অন্তর্বর্তী প্রধান ড. ইউনুসের রোডম্যাপ ঘোষণা ও দৃঢ় অবস্থানের ফলে ধীরে ধীরে কমেছে।
নির্বাচন ও সংস্কারের প্রশ্নে তিনি বলেন যে কিছু সংস্কার আছে যেগুলোকে অনিবার্য বলে দেখেন; যেখানে আইনগত বা সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট প্রয়োজন সেখানে নির্বাচিত সংসদেই সিদ্ধান্ত নেওয়াই উত্তম হবে—এমনটাই বিএনপির নীতিগত অবস্থান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে যেগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত হয়েছে সেগুলোই প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে বাস্তবায়ন করবেন এবং দল হিসেবে ৩১ দফার মধ্য থেকে যেগুলো মিল আছে সেগুলোও সরকার গঠনে সুযোগ পেলে নিয়ন্ত্রণ করবেন।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নে তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেন, “সবার আগে বাংলাদেশ” — কূটনীতির প্রধান নীতিই হবে দেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বকে অক্ষুন্ন রাখা। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে দেশের পানির হিস্যা ও সীমান্তে ঘটা হত্যাসহ যেখানে মানুষের ওপর আঘাত এসেছে, সে ধরনের অনুশীলন গ্রহণ করা হবে না এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হবে। কথোপকথনে তিনি বলেন, যদি কোনো দেশের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয় আর সেখানে স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থান রাখা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে করে কিছু করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না—এমনটাই তিনি জানতে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন নিয়ে তিনি অতীতের ভালো দিকগুলো উদাহরণ হিসেবে টেনে বলেন যে বিএনপির ইতিহাসে গার্মেন্টস শিল্প ও প্রবাসী কল্যাণসহ কিছু অর্জন ছিল, এবং ভবিষ্যতে এসব অর্জন ও জনগণের কল্যাণ কেন্দ্র করে দল কাজ করবে। তিনি স্বীকার করেছেন যে নির্বাসনে থেকে দল পরিচালনা করা কঠিন ছিল; ব্যক্তিগতভাবে কড়াকড়ি ও বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও শিখেছি এবং সুযোগ পেলে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের ওপর জোর দেবেন। সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে বিএনপি ক্ষমতায় এলে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে সম্মান করা হবে এবং কাদের বিরুদ্ধে কড়া আইন থাকলে সেগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হবে।
সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট থেকে পশুপ্রেম, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ও মিম-সংস্কৃতির প্রসঙ্গেও আলোচনায় আসেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্কতা ও ফ্যাক্ট-চেকের গুরুত্বে জোর দিয়েছেন এবং বলছেন যে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতেই হবে, তবু মিথ্যা অপপ্রচার যেন সংবাদ হিসেবে ছড়ানো না হয় তা নিয়ে সচেতনতা থাকা দরকার।