২০২৫ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন গবেষক— জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ দেভরেট এবং জন এম মার্টিনিস। বৈদ্যুতিক বর্তনীতে কোয়ান্টাম টানেলিং এবং শক্তির নির্দিষ্ট পরিমাপ আবিষ্কারের জন্য এই তিন বিজ্ঞানীকে যৌথভাবে এ বছরের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
নোবেল কমিটির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই তিন পদার্থবিজ্ঞানী এমন এক যুগান্তকারী গবেষণা করেছেন যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জটিল তত্ত্বকে বাস্তব প্রযুক্তির জগতে প্রয়োগের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তারা এমন এক বৈদ্যুতিক সার্কিট তৈরি করেছেন যা এক কোয়ান্টাম অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় টানেলিং করে যেতে পারে— যেন একটি কণা দেয়াল ভেদ করে চলে যাচ্ছে।
গবেষণার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছেন, এই সার্কিট নির্দিষ্ট মাত্রায় শক্তি শোষণ ও বিকিরণ করে, যা কোয়ান্টাম তত্ত্বের পূর্বাভাসের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই সাফল্য কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে ‘ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং’-এর ব্যবহারিক দিক উন্মোচন করেছে।
জন ক্লার্কের জন্ম ১৯৪২ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে। ১৯৬৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। মিশেল দেভরেট ১৯৫৩ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮২ সালে প্যারিস-সুড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ইয়েল ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপরদিকে জন এম মার্টিনিস, যার জন্ম ১৯৫৮ সালে, তিনিও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৭ সালে পিএইচডি অর্জন করেন এবং সেখানে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটি বলেছে, “এই আবিষ্কার দেখিয়েছে, কোয়ান্টাম তত্ত্ব কেবল অণু-পরমাণুর স্তরে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানব-নির্মিত যন্ত্রেও তার কার্যকর প্রভাব দেখা যায়।”
এর আগের বছর, ২০২৪ সালে, কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ও মেশিন লার্নিংয়ের মৌলিক আবিষ্কারের জন্য জন জে হোপফিল্ড ও জিওফ্রি ই. হিন্টন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন। ২০২৩ সালে যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন পিয়ের অগস্টিনি, ফেরেঙ্ক ক্রাউৎজ ও অ্যানে এলহুইলার— ইলেকট্রন গতিবিদ্যা বিষয়ক গবেষণার জন্য।
নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রবীণ বিজয়ী ছিলেন আর্থার আসকিন, যিনি ২০১৮ সালে ৯৬ বছর বয়সে পদার্থবিজ্ঞানে পুরস্কার পেয়েছিলেন। আর সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল জয় করেছিলেন লরেন্স ব্রেগ, ১৯১৫ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে। একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে জন বার্ডিন দুইবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জেতেন।