ফ্রান্সে চলমান রাজনৈতিক সংকট নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দেশের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী সেবাস্টিয়ান লেকরনু পদত্যাগ করেছেন, মাত্র ১৪ ঘণ্টা আগে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর। এই পদত্যাগের ফলে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে হবে।
লেকরনুর পদত্যাগ রাজনৈতিক অস্থিরতার বহুমুখী প্রতিফলন। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সে গত দুই বছরে লেকরনুসহ মোট পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। লেকরনু নতুন মন্ত্রিসভা তৈরি করলেও বিরোধী দলগুলোর প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন, যা তার পদত্যাগের মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলেও লেকরনু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন, ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত পেনশন নীতিই চলমান রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ।
এদিকে, প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বুধবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ফ্রান্সে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। অধিকাংশ আইনপ্রণেতা স্থিতিশীলতা চাইছেন, কারণ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন বাজেট পাস করতে হবে। তাই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রেসিডেন্ট একটি নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লেকরনু ম্যাক্রোঁর বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি জাতীয় বাজেট কাটছাঁট এবং ঋণের চাপের মধ্যে সরকারে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেপ্টেম্বরের শুরুতে কল্যাণমূলক ও জনস্বার্থ সম্পর্কিত খাত থেকে মোট ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব পাস করা হয়। এতে সাধারণ জনগণ ও বিরোধী দলগুলো ক্ষুব্ধ হন। পার্লামেন্টে আস্থাভোটে হেরে পূর্বসূরী প্রধানমন্ত্রী ফাঙ্কোইস বায়রো ৮ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লেকরনু নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান।
কিন্তু লেকরনুর দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ২৭ দিনে এবং মন্ত্রিসভা গঠনের ১৪ ঘণ্টার মাথায় পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হওয়ায় তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ফ্রান্সের বামপন্থি দল ও ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন, জনগণের ক্ষোভ, এবং বাজেট কাটছাঁটের বিরোধ এই সংকটকে আরও জটিল করেছে।
ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতার এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর হাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগের দায়িত্ব এসেছে, যা দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আগামী বাজেট কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।