সিলেটের সবুজ পাহাড়ি জমিগুলো আজ মারাত্মক সংকটের মুখে। পাহাড়ের ঢাল, বন্যার পানি, মাটিক্ষয় এবং বনভূমি হারানো মিলিয়ে কৃষি এলাকা এখন টেকসই ব্যবহারের মাত্র এক-চতুর্থাংশের বেশি নয়। ধারাবাহিকভাবে লাভজনক জমি মাত্র ২০ শতাংশেরও কম। তিন বছর ধরে সিলেটের কৃষকরা নিয়মিত লাভ পাচ্ছেন না, যা কেবল তাদের আয়ের ক্ষতি করছে না, পুরো অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত ‘প্রোডাক্টিভ অ্যান্ড সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার সার্ভে ২০২৫’ রিপোর্টে দেখা গেছে, সিলেটে মাত্র ২৪.৭৫% কৃষিজমি টেকসইভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ধারাবাহিকভাবে তিন বছরের জন্য লাভজনক জমি মাত্র ২১.৮৯%। ফলে সিলেট দেশের মধ্যে টেকসই কৃষিজমির দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে। রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয়ভাবে দেশের মোট কৃষিজমির ৭৮.৭৯% অন্তত একবার গত তিন বছরে লাভজনক হয়েছে। সবথেকে লাভজনক জমি তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আয় দিয়েছে, যা ৪২.৭৬%। আংশিকভাবে লাভজনক জমি এক বা দুই বছরের জন্য আয় করেছে, যা ৩৬.০৩%, এবং অলাভজনক জমি তিন বছরই আয় করতে পারেনি, যা ২১.২১%। গ্রামীণ এলাকায় কৃষিজমি প্রায় জাতীয় গড়ের সমান টেকসই হলেও শহরের জমি তুলনামূলকভাবে কম টেকসই; শহরের ৪৩.৯৮% জমি লাভজনক হলেও ২৫.০৪% জমি অলাভজনক। দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম সবচেয়ে পিছিয়ে। বরিশালে টেকসই জমির হার ৩৪.১৭%, চট্টগ্রামে ৪২.৭৩%, আর সিলেটে সর্বনিম্ন ২৪.৭৫%। সিলেটে আংশিকভাবে লাভজনক জমির হার ৫৬.৯৬%, যা দেখায় কিছু বছর লাভজনক হলেও ধারাবাহিকতা নেই। অন্যদিকে, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী টেকসই অবস্থা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। খুলনা বিভাগে তিন বছরের ধারাবাহিকভাবে লাভজনক জমি ৫৬.৩৬%, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, টেকসই কৃষিজমি কমে যাওয়া মানে জমির উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করবে। সিলেটে পাহাড়ি জমি, বন্যা, মাটিক্ষয় এবং বনভূমি হারানো প্রধানভাবে এই সমস্যার কারণ। বরিশাল ও চট্টগ্রামে বন্যা, লবণাক্ততা এবং অপর্যাপ্ত সেচব্যবস্থা সমস্যার উৎস। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের খাদ্য উৎপাদনব্যবস্থা বিপন্ন হবে। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, টেকসই কৃষিজমি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন সঠিক জমি ব্যবস্থাপনা, আধুনিক সেচব্যবস্থা, জৈব সার ব্যবহার, নতুন প্রযুক্তি ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা বৃদ্ধি। সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া সিলেটের কৃষি এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা দুটোই ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।