নলডাঙ্গা ইব্রাহিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ্যাডহক কমিটিকে ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক মহল দ্বারা হুমকি ধামকির শিকার হয়ে পুলিশ পাহারায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক স্বপন বিশ্বাসকে। ২৯ ডিসেম্বর সকালে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা প্রতিষ্ঠান এবং বাসায় গিয়ে বলপ্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। যে কারনে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তিনি। গত ১৫ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষক ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি জমা দেওয়া পর থেকে এই উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তথ্য পাচার হওয়ার কারনে এই বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিরন্ত্রনের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান স্বপন বিশ্বাস গত ২৮ ডিসেম্বর শনিবার আবেদকৃত ৯ সদস্যসহ অভিভাবকদের প্রতিষ্ঠানে আহ্বান জানান। ৬ সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে প্রেরিত ৩ সদস্যের এ্যাডহক কমিটি জনসম্মুখে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত গৃহিত হলেও প্রভাবশালী নেতারা তা মানতে নারাজ। স্থানীয় অভিভাবকরা মনে করেন যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত হয় যে কারনে স্থানীয় জনমতের ভিত্তিতে বিয়টি মিমাংসা হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারবে। নলডাঙ্গা ইব্রাহিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন বিশ্বাস বলেন,আমাকে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারা ফোন করে আবার নাম দিতে বাধ্য করছে। আমি স্থানীয় জনমতের বিত্তিতে ৩ সদস্যের এ্যাডহক কমিটি শিক্ষা অফিস বরাবর প্রেরন করলেও নতুন করে তালিকা প্রেরনের জন্য বলপ্রয়োগ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিষয়টি অবগত করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন স্যারেরা বিয়টি জানেন। সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই সুবাদে শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করছেন। নির্বাচনে সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি (উচ্চ মাধ্যমিক) ও সাধারণ অভিভাবক প্রতিনিধি (মাধ্যমিক) স্তরে প্রত্যেক প্রার্থীদের নিকট থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকালে ১ হাজার টাকার স্থলে রশিদ ছাড়া ৩ হাজার টাকা আদায় করেছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে দুই প্রার্থী আব্দুল মুজিব ও মো. হামিদুর রহমান সহ কতিপয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকালে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রদান না করারও অভিযোগ রয়েছে। ছাড়াও বিগত ২০২০—২২ ও ২০২২—২৪ সালে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হিসাবে পরপর দুইবার নির্বাচিত হন আব্দুল মমিন এবং চলতি বছর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য হিসাবে প্রার্থী হয়েছেন মো. জামিল আহমদ। তিনি ইতোপূর্বে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রথমবার বিদ্যুৎসাহী সদস্য ও পরে আবারও অভিভাবক সদস্য হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও সরকারি বিধিমালায় কোন ব্যক্তি একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে পরপর দুইবারের অধিক সভাপতি, শিক্ষা প্রতিনিধি বা অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার নিয়ম নেই। এরপরও ২০২৪—২৬ সনে আবারও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আব্দুল মমিন গোপনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় দাতা সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও বিদ্যালয়ের আরও অনেক দাতা সদস্য রয়েছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও গণ্যমান্য শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য প্রার্থী মো. হামিদুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে আমি ৩ হাজার টাকা দিয়ে মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আমাকে ভোটার তালিকা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির লোকজন আমাকে ভোটার তালিকা দেয় নাই। এই অল্প সময়ে আমি কার কাছে ভোট চাইবো। তাই ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। পাথারিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও ম্যানেজিং কমিটির অসাধু কিছু লোকজনদের যোগসাজসে বিদ্যালয়ের মান সম্মান ডুবিয়েছেন। তারা বিদ্যালয় ও কলেজকে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে বেছে নিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয় পরিচালনা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার নামে অসাধু উপায়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তৃতীয়বারের মতো দাতা সদস্য হিসেবে একজন নির্বাচিত হয়ে বসে আছেন। এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচন আমরা চাই না। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিবাবক নির্বাচন সম্পর্কে জানে না। গোপনে স্বল্প পরিসরে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করেছেন তারা। তাই এলাকার মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে সৎ, শিক্ষিত ও যোগ্য লোককে নির্বাচিত করার সুযোগ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মমিন জানান, আমি চার বার বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এবারও বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে দুই দাতা সদস্য অনুমোদন দিয়েছেন। আগের আইনে আমি সভাপতি ঠিক আছি। বর্তমান আইনেও আমি বৈধ সভাপতি হয়েছি। পাথারিয়া সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিধি মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটির সাথে সভা করে এবং বিদ্যালয়ের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকায় মনোয়ন ফরম বিক্রয় করেছি। ভোটার তালিকা প্রার্থীরা নিজ খরচে অফিস চলাকালীন সময়ে ফটোকপি করে নেওয়ার জন্য বলেছি। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে সবকিছু করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকলে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।