বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আন্দোলন। এই পদ্ধতির দাবি নিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা ও মাঠে সরব উপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে, দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই প্রস্তাবের প্রতি সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে। ফলে বিরোধী রাজনীতির ভেতরে নতুন এক মতভেদ ও দ্বন্দ্বের আভাস মিলছে।
জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, দেশে বিদ্যমান একক আসনভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থা বড় দলগুলোর পক্ষে সুবিধাজনক, যেখানে ছোট বা মাঝারি আকারের দলগুলো প্রকৃত ভোটের অনুপাতে আসন পায় না। তাদের মতে (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) চালু হলে ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বণ্টন হবে এবং এতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এ ব্যবস্থায় জনগণের ভোট আরও মূল্যবান হবে, কারণ কোনও দল সামান্য ব্যবধানে হেরে গেলেও তাদের ভোট সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।
কিন্তু বিএনপি এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় পিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি আরও বাড়বে এবং আঞ্চলিক ও ধর্মভিত্তিক ছোট দলগুলো অস্বাভাবিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তারা আশঙ্কা করছে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে জামায়াত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো সংসদে তুলনামূলক বেশি আসন পেতে পারে, যা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ধারার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, জামায়াতের এই উদ্যোগ গণতান্ত্রিক কাঠামোয় একটি নতুন সংযোজন হতে পারে। এতে রাজনৈতিক বহুত্ববাদ বৃদ্ধি পাবে এবং ভোটের প্রকৃত প্রতিফলন সংসদে দেখা যাবে। অন্যদিকে, অনেকেই মনে করেন, পিআর ব্যবস্থা এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য প্রস্তুত নয়। কারণ, দলীয় আনুগত্য, আদর্শিক বিভাজন এবং প্রশাসনিক কাঠামো এই ব্যবস্থাকে সহায়তা করার মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
জামায়াতের নেতারা বলছেন, তারা এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা পিআর ব্যবস্থা সমর্থন করে না এবং বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচনী সংস্কার চায়।
ফলে, বিরোধী শিবিরে এখন স্পষ্টভাবে দুটি ভিন্ন অবস্থান দেখা যাচ্ছে। একদিকে জামায়াত পিআর পদ্ধতিকে সামনে রেখে আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়, অন্যদিকে বিএনপি এই প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে। এতে ভবিষ্যতের রাজনীতি ও বিরোধী ঐক্য প্রচেষ্টায় নতুন জটিলতার ইঙ্গিত মিলছে। পিআর ইস্যু এখন কেবল একটি নির্বাচনী সংস্কার প্রস্তাব নয়, বরং এটি বিরোধী জোট রাজনীতিতে মতপার্থক্যের এক নতুন অধ্যায়। এই ইস্যু ভবিষ্যতে বিরোধী ঐক্য ও নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।