একসময় বগুড়া শহরের ব্যস্ত রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গ্রামের মাটির পথেও প্যাডেল রিকশাই ছিল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যানবাহন। শহরের সাতমাথা থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে চলতো সারি সারি রিকশা। আবার গ্রামের হাট-বাজার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যমও ছিল এই ঐতিহ্যবাহী বাহন। কিন্তু ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার আগ্রাসনে এখন সেই রিকশা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
শহরে যানজট ও যাত্রীর চাপ সামাল দিতে দ্রুতগামী অটোরিকশা যাত্রীদের কাছে এখন প্রথম পছন্দ। আগে সাতমাথা থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ বা মোকামতলা পর্যন্ত যেতে রিকশাই ছিল ভরসা। এখন একই দূরত্বে কম সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করা যায় অটোরিকশায়। ফলে শহরের প্রায় প্রতিটি মূল সড়ক ও অলিগলিতে রিকশার জায়গা দখল করেছে অটোরিকশা।
গ্রামাঞ্চলের চিত্রও ভিন্ন নয়। আগে মাটির রাস্তায় বা ইট বিছানো সরু গলিতে প্যাডেল রিকশাই চলাচলের উপযোগী ছিল। এখন গ্রামীণ সড়কগুলোতে ব্যাপক হারে পাকা রাস্তা হওয়ায় সেসব জায়গাতেও সহজেই অটোরিকশা চলতে শুরু করেছে। ফলে গ্রামের হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য মানুষ প্যাডেল রিকশার বদলে অটোরিকশাই ব্যবহার করছে।
চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে দিনে রিকশা চালিয়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন প্রতিযোগিতার কারণে যাত্রী মিলছে না। অন্যদিকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা দিয়ে দিনে সহজেই ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা আয় করা সম্ভব। আবার শারীরিক কষ্টও কম হওয়ায় অনেকে ঋণ করে হলেও অটোরিকশা কিনছেন। ফলে প্যাডেল রিকশা চালকরা পেশা পরিবর্তন বা বেকার হয়ে পড়ছেন।
যাত্রীরাও মনে করেন, শহর হোক বা গ্রাম-অটোরিকশা সময় বাঁচায় এবং তুলনামূলক আরামদায়ক। একই দূরত্বে রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়া প্রায় সমান হওয়ায় যাত্রীরা প্যাডেল রিকশার দিকে আর ফিরছেন না।
তবে পরিবেশবিদ ও সামাজিক সংগঠনগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বগুড়া শহর ও আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় নিম্নমানের ব্যাটারি ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো অযত্নে ফেলে দিলে মাটি ও পানির মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন না মানা ও অতিরিক্ত যানজট দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যাডেল রিকশা একসময় বগুড়ার নগর সংস্কৃতি ও গ্রামীণ জীবনের অংশ ছিল। রঙিন রিকশার সাজসজ্জা, ঘণ্টাধ্বনি আর চালকের সুরেলা ডাকে শহর-গ্রামের রাস্তাঘাট মুখর থাকত। এখন সেই ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে।
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত অন্তত কিছু এলাকায় প্যাডেল রিকশা সংরক্ষণ করা। এতে ঐতিহ্য টিকে থাকবে, আর নিম্নআয়ের চালকেরা জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পাবেন।