মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ে অনিয়ম

শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:২৬ এএম | প্রকাশ: ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম
শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুদক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কার্যাদেশে অনিয়ম, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১২ অক্টোবর) দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে মামলার অনুমোদন দিয়েছে এবং বিকেলে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডকে সরকারি ক্রয়বিধি উপেক্ষা করে একক উৎসভিত্তিক পদ্ধতিতে পাঁচ বছরের জন্য টোল আদায়ের কাজ দেওয়া হয়। এর আগে আহ্বান করা টেন্ডার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই বাতিল করা হয় এবং অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বা আলোচনার সুযোগ না দিয়েই সিএনএসের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী সিএনএস লিমিটেডকে মোট আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়, যা সরকারি ক্রয়নীতির সরাসরি লঙ্ঘন বলে দুদক মনে করছে। ওই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল গ্রহণ করে।

তুলনামূলকভাবে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত একই সেতুর টোল আদায়ের কাজ মাত্র ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় সম্পন্ন করেছিল এমবিইএল-এটিটি নামে একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে ২০২২ সালে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড একই কাজের জন্য তিন বছরের কার্যাদেশ পায় ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকায়, যা পাঁচ বছরের হিসাবে প্রায় ১১২ কোটি টাকার সমান।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিএনএস লিমিটেড ‘নতুন প্রযুক্তি স্থাপন ও অবকাঠামো ব্যয়’ বাবদ আরও ৬৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার দাবি করে, যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে অনিয়ম ও যোগসাজশের মাধ্যমে সরকারের মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা।

দুদক মনে করছে, সিএনএস লিমিটেডের পরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা ও তৎকালীন মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশে এই অনিয়ম করেছেন।

মামলার অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক সচিব, প্রকৌশলী ও বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দুদক বলছে, অভিযুক্তরা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও যোগসাজশের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছেন। এই অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে