পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সরকারি দপ্তরগুলোতে কর্মকর্তা সংকটে প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। উপজেলার ১৭টি সরকারি দপ্তরের মধ্যে ১৩টিতেই বর্তমানে কোনো স্থায়ী কর্মকর্তা নেই। ফলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অন্য উপজেলা থেকে আসা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করেই চলছে উপজেলা প্রশাসন।
তবে এসব কর্মকর্তা সপ্তাহে এক-দু’দিনের বেশি উপস্থিত থাকতে না পারায় সেবাপ্রত্যাশী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিটি দপ্তরে গেলেই শুনতে হয়- “স্যার আসেননি”, “আজ দায়িত্বে অন্য কেউ”, অথবা “ফাইল অন্য উপজেলা থেকে আনতে হবে।”
উপজেলার ভূমি, শিক্ষা, প্রকৌশল, সমাজসেবা, যুব উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা, তথ্য ও প্রযুক্তি, হিসাবরক্ষণ, নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো বছরের পর বছর স্থায়ী কর্মকর্তাশূন্য। এতে সাধারণ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আর দাপ্তরিক কার্যক্রমে পড়ছে স্থবিরতা।
উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম হাওলাদার বলেন, “উপজেলা ভূমি অফিসে ১১ মাস ধরে কোনো এসিল্যান্ড নেই। ভূমি সংক্রান্ত কাজে গিয়ে আমরা নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এসিল্যান্ডের দায়িত্ব এখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পালন করছেন। কিন্তু কাজের জন্য গেলে বলা হয়- আজ না কাল হবে, এভাবে দিনের পর দিন কাজ বন্ধ পড়ে থাকে।”
সম্প্রতি আরও এক ধাক্কা এসেছে উপজেলা প্রশাসনে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান বিন মুহাম্মদ আলী পদোন্নতি পেয়ে ফরিদপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি হয়েছেন। তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নতুন ইউএনও পদায়ন হয়নি।
ইউএনও হাসান বিন মুহাম্মদ আলী আমার দেশ-কে বলেন, “উপজেলার বেশ কিছু দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তা নেই। এসব পদে দ্রুত নিয়োগের জন্য আমি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার প্রস্তাব করেছি।”
এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামী নেতা মাসুদ সাঈদী বলেন, “গত বছর ৫ আগস্টের পর আমি এ উপজেলার নাম পুনরায় ‘জিয়ানগর’ করার জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এখন দেখি ১৭টির মধ্যে ১৩টি দপ্তর কর্মকর্তা শূন্য। মানুষ সেবা পাবে কীভাবে? আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই, উন্নয়নবঞ্চিত এই উপজেলায় দ্রুত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হোক।”
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, “সাধারণ মানুষ যথাযথ সেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, যেন দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ করা হয় এবং পাশাপাশি ইন্দুরকানী উপজেলার নাম পরিবর্তন করে পুনরায় ‘জিয়ানগর’ নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবারই একই দাবি-দীর্ঘসূত্রতা না করে অতি দ্রুত এসব শূন্যপদে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হোক, যাতে জনগণ অন্তত ন্যূনতম সরকারি সেবা নিশ্চিতভাবে পেতে পারে।