রঙিন মাছের ঝিলমিলে খেলা দেখতে ভালোবাসেন অনেকেই। অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে শুরু করে বাড়ির ছোট পুকুর-সবখানেই এসব মাছ এখন সৌখিনতার প্রতীক। এমন রঙিন মাছই বদলে দিয়েছে দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই হাজীপাড়া গ্রামের মো. ইয়াছিন আলী রাকিবের জীবন। শখের বশে শুরু করা মাছ চাষেই আজ সে সফল উদ্যোক্তা।
শখের ছয়টি গাপ্পি মাছ দিয়ে শুরু করা তার ছোট্ট যাত্রা আজ তাকে দাঁড় করিয়েছে একজন সফল উদ্যোক্তার আসনে। নিজের খামারের নাম রেখেছেন ‘ইয়াছিন একুয়া ফার্ম’।
২০১৯ সালের শেষ দিকে মাত্র ৩০০ টাকায় ছয়টি গাপ্পি মাছ ও ৬০ টাকায় একটি খাবারের প্যাকেট কিনেছিলেন রাকিব-এটাই ছিল তার প্রথম বিনিয়োগ। শুরুতে বাজারজাত করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না, কেবল শখের বশে মাছ পালন শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাছগুলো বড় হতে হতে বাচ্চা দিতে শুরু করলে তার মনে জাগে নতুন এক স্বপ্ন। এরপর তিনি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে পালন শুরু করেন। প্রায় তিন থেকে চার বছর চেষ্টা-পরীক্ষা ও শেখার পর শুরু করেন বাণিজ্যিকভাবে মাছ বিক্রি।
এক সময় খামারের পাশাপাশি দুটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন রাকিব। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, চাকরির পেছনে ছুটলে নিজের স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয়। অবশেষে সাহস করে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।
আজ সেই সাহসী সিদ্ধান্তের সুফল পাচ্ছেন রাকিব। তার খামারের রঙিন মাছ এখন দেশের ৬৪ জেলায় যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১৭-১৮ প্রজাতির মাছ বিক্রি করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার কাছ থেকে মাছ কিনে ৫-৬ জন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খুচরা বিক্রি করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। বর্তমানে তার খামারে কাজ করছেন দুজন কর্মচারী, আর বছরে প্রায় চার লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে ‘ইয়াছিন একুয়া ফার্ম’ থেকে।
বাঁশ ও জালের ঘেরা ছোট ছোট চৌবাচ্চায় এখন সাজানো রয়েছে নানান প্রজাতির রঙিন মাছ-গাপ্পি, মলি, প্লাটি, সরটেইল, জেব্রা, কই কার্প, কমেট, গোড়ামী, এঞ্জেল, টাইগার বার্ব, গ্রীন বার্ব, টেট্রা, টাইগার সার্ক, ব্ল্যাকমর, রেড কেপ, গোল্ড ফস, পেরোট ও এলগি-সব মিলিয়ে ১৮ প্রজাতির মাছ। এই বৈচিত্র্যই তাকে বাজারে এনে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি।
তরুন উদ্যোক্তা ইয়াছিন আলী রাকিব বলেন, “আমার খামারে বর্তমানে ১৮ প্রজাতির মাছ আছে। এই মাছ দেশের ৬৪টি জেলায় বিক্রি হচ্ছে। খামারে দুইজন কর্মী কাজ করছে। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে আমার প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। খামারটি শুরু করার পর আমি দুটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিলাম, কিন্তু সেই চাকরি ছেড়ে খামারের ওপর মনোযোগ দিয়েছি।”
দিনাজপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, “তরুণ উদ্যোক্তা ইয়াছিন আলী রাকিব নিজের বাড়িতে ছোট ছোট হাউসে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি শুধু পাইকারি বাজারেই নয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও মাছ বিক্রি করছেন। তার কাছ থেকে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষার্থী মাছ সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করছেন। ইয়াছিনকে আমরা মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। একজন তরুণ হিসেবে তার এই উদ্যম ও পরিশ্রম সত্যিই অনুকরণীয়। আমি তার এই উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই।”