ফুলবাড়ীতে খেজুর গুড় তৈরিতে, ব্যস্ত গাছিরা

এফএনএস (প্রভাষিকা রীতা গুপ্তা; ফুলবাড়ি, দিনাজপুর) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:২১ এএম
ফুলবাড়ীতে খেজুর গুড় তৈরিতে, ব্যস্ত গাছিরা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী-বিরামপুর রেলপথের মাঝামাঝি এলাকার বারোকোনা গ্রামের শেষ সীমানায় সাহাবাজপুর নয়াপাড়ায় নামক স্থানে খেজুর গুড় তৈরি ও বিক্রি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহী থেকে আসা গাছিয়ারা।  ফুলবাড়ী-বিরামপুর রেলপথের মাঝামাঝি এলাকায় থাকা দেড় শতাধিক খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সূর্য উঠার পরপরই মাটির তৈরি চুলায় টিনের কড়াই বসিয়ে খেজুরের রস ঢেলে জ্বাল করে তৈরি করা সুস্বাদু খেজুর গুড়। সরেজমিনে সাহাবাজপুর নয়াপাড়া রেল লাইনের পার্শ্বে গিয়ে দেখা যায়, খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির কার্যক্রম চলছে। রেললাইনের দুপাশে সারি সারি রয়েছে খেজুরের গাছ। এইসব গাছ থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে রস আর সেই রসকে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু খেজুরের গুড়। ভোরের সূর্য ওঠার আগে গাছিরা রসভর্তি মাটির হাঁড়ি গাছ নামিয়ে মাটির তৈরি চুলায় টিনের বড় কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে গুড়-পাটালি ও লালি তৈরি করছেন। নতুন খেজুর রসের গুড় তৈরির পর তা চলে যাচ্ছে স্থানীয় গ্রামবাসীদেরসহ বাজারে। রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি ও বাজারে বিক্রি করতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গাছিরা। জানা যায়, গাছিয়া আশরাফ উদ্দিন (৫৮) ও সুমন সরকার (৩৮) রাজশাহী বাঘা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা। শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে সেগুলো জ্বাল দিয়ে খেজুরের গুড়-পাটালি ও লালি তৈরি করে বিক্রি করেই চলে ছয় মাসের ভরন পোষণ। গত বছর একই গ্রামের কয়েকজন গাছি ফুলবাড়ীতে এসে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কারবার করেন। কিন্ত তারা এ বছর আসবেন না এমন তথ্য পেয়ে আশরাফ উদ্দিন ও সুমন সরকার এ বছর চলে এসেছেন এখানে। রেল লাইনের পশ্চিম পার্শ্বে ঝুপড়ি তৈরি করে সেখান থেকে চলছে তাদের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কারবার। এ বছর ফুলবাড়ী ও বিরামপুর সীমান্ত এলাকার রেল লাইনের দুই পার্শ্বের দেড় শতাধিক খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ গুড়-পাটালি ও লালি তৈরি করছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৪ থেকে ১৫ কেজি গুড়-পাটালি ও লালি তৈরি করছেন। যেগুলো স্থানীয় গ্রামবাসীরাই ২২০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বাজারে বিক্রির কোনো গুড় থাকছে না। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন তাদের গড়ে আয় হয় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। বছরে পাঁচ মাস তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি ও বিক্রির কাজ করলেও অন্য সময়ে নিজ এলাকায় থেকে অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকেন।  গাছিয়া আশরাফ উদ্দিন ও সুমন সরকার বলেন, পৈত্রিক সূত্রে এই পেশায় আসা। দেশের বিভিন্ন স্থানের খেজুর গাছ চুক্তিতে নিয়ে সেই সব গাছের রস নামিয়ে গুড় তৈরি ও বিক্রি করে থাকেন। ওই এলাকার রেললাইনের পাশের দেড় শতাধিক খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে সেগুলোর গুড় তৈরি করে স্থানীয়ভাবে আশপাশের গ্রামবাসিদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রস্তুত করা প্রতিটি গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি গাছ থেকে শুরুতে এক থেকে দুই কেজি করে রস সংগ্রহ হয় এবং আস্তে আস্তে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। এটাই তাদের মূল পেশা। গুড় কিনতে আসা বারোকোনা গ্রামের সেকেন্দার আলী বলেন শীত শুরুর পর থেকেই পিঠা-পায়েস খেতে খেজুর গুড়ের প্রয়োজন হয়। এখানে গাছিদের তৈরি গুড় নির্ভেজাল ও মানসম্মত। এ জন্য আশপাশের গ্রামের লোকজনই গুড় তৈরির পরপরই সবগুড়ই নিকে নিয়ে যাচ্ছেন। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে