খুলনায় শিশু জিসান হত্যার দায় স্বীকার

এফএনএস (এম এ আজিম; খুলনা) : | প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
খুলনায় শিশু জিসান হত্যার দায় স্বীকার

খুলনা জেলার দিঘলিয়ার ৭ বছরের শিশু জিসানকে হত্যা করে প্রতিবেশী ফয়সাল। আর লাশ গুম করার জন্য সহযোগিতা করে তার মা-বাবা। রোববার বিকেলে খুনি ফয়সাল ও তার বাবা-মা খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের আদালত-১ এ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলিয়া থানার জিআরও এএসআই ইমাম আলী।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিটন কুমার মন্ডল বলেন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর কক্ষে প্রথমে হত্যাকারী ফয়সাল (২৬), পরবর্তীতে তার বাবা জিএম হান্নান (৫২) ও সর্বশেষ তার মা মাহিনুর বেগম (৪৫) ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে, সন্তান হারা জিসানের মায়ের আহাজারি যেন থামছেনা। ১২ বছর বয়সি বড় ছেলে রাশেদকে জড়িয়ে ধরে একের পর এক বিলাপ করে চলেছে। ‘আমার বাজান তো কোনো অন্যায় করে নাই। আমার লগে ওদের কোনো শত্রুতা নাই। কেন ওরা আমার বাজানরে মাইরা ফালাইলো। কেমনে আমার বাজানরে খুন করল? আমি এইডার বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার বাবারে ওরা যে কষ্ট দিছে, আমিও ওগো সেই কষ্ট দিবার চাই। আমার বাবারে যেভাবে শাস্তি দিছে, আমিও ওদের সেভাবে শাস্তি চাই। আমি ওগো ফাঁসি চাই। আমার বাজান মসজিদ থেইক্যা নামাজ পইড়া বাহির হইছে বৃহস্পতিবারের দিন। ওই শয়তানও সাথে নামাজ পড়ছে। নামাজ পইড়া দু’জন একসাথে বাহির হইছে। এরপর আমার বাবারে হাত ধরে লইয়া কাম করছে’।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিটন কুমার মন্ডল বলেন, ৯ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিশু জিসানকে ফয়সাল তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি দড়ি দিয়ে বেঁধে রান্নাঘর থেকে একটি দা এনে কুপিয়ে হত্যা করে জিসানকে। ঘটনাটি প্রথমে ফয়সালের মা মাহিনুর বেগম আঁচ করতে না পারলেও পরবর্তীতে সে জানতে পারে তার ছেলে একটি শিশুকে হত্যা করেছে। এরপর খবর দেয় ফয়সালের বাবা হান্নানকে। তারা উভয়ে লাশটি গুম করার জন্য প্রথমে প্লাস্টিকের বস্তায় এবং পরবর্তীতে একটি চটের বস্তায় করে বাড়ির পূর্ব পাশের দেওয়ালের কাছে মাটি চাপা দেয় শিশু জিসানকে। 

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি যাতে কেউ আঁচ করতে না পারে সেজন্য মাটির উপর রোদে শুকানোর জন্য পাটখড়ি সাজিয়ে রাখে তারা। তিনি বলেন, ফয়সাল প্রায় জিসানকে ইসলামের দাওয়াত দিলে সে প্রায়ই নাকচ করে দিত আর এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়।

দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচএম শাহীন বলেন, ‘কি কারণে কেন শিশু জিসানকে হত্যা করেছে এর উত্তর বের করার জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। বাদির সাথে তাদের কোন শত্রুতাও ছিল না। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ফয়সাল মাদকাসক্ত ছিল’।

হত্যার সঙ্গে জড়িত ফয়সালের চাচা জিএম আকরাম বলেন, ‘সরকারি সেনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফয়সাল এসএসসি পাস করে। এরপর স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে। ওদের স্বভাব চরিত্রের কারণে আমি খোঁজখবর রাখি না। মাঝেমধ্যে ওর মাথার ঠিক থাকতো না, পাগলামি করত। 

উল্লেখ্য, বড় ছেলে রাশেদ নানা নানির সঙ্গে ভোলায় থাকে। ছোট ছেলে জিসান বাবা-মায়ের সঙ্গে দৌলতপুর-দেয়াড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের কোয়ার্টারে বসবাস করত। জিসানের বাবা আলমগীর হোসেন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের মেকানিক্যাল বিভাগের শ্রমিক।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে