ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের পাঁচবারের ইউপি সদস্য ও উপজেলা পরিষদের টানা দুইবারের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগমের ১৩০ শতক বসতবাড়ির মধ্যে ৫৩ শতাংশ জায়গা দখলে নিয়ে বেড়া দিয়েছেন স্থানীয় যুবদলের এক নেতা। বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রোকেয়া বেগম দত্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বসতবাড়ি দখলে নেওয়া ব্যক্তির নাম আতাউর রহমান (৩৬)। তিনি কালীকচ্ছ ইউনিয়ন শাখা যুবদলের আহবায়ক এবং রোকেয়া বেগমের প্রতিবেশী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে আতাউর রহমানের পিতা আহমেদুর রহমানের সঙ্গে বোকেয়া বেগমের বিরোধ চলে আসছে। তখন আহমেদুর রহমান ছিলেন কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আর রোকেয়া বেগম ছিলেন ওই ইউপির নারী সদস্য। রোকেয়া বেগম ও তার তিন বোন ১৩০ শতক জায়গার মালিক। এর মধ্যে ১০ শতক জায়গার ওপর ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি জামে মসজিদ। মসজিদের ১০ শতাংশ জায়গাসহ ৫৩ শতক জায়গা নিয়ে প্রতিবেশী সুলতান আলী ও তার দুই ভাইয়ের সঙ্গে ২০০১ সাল থেকে রোকেয়া বেগমের বিরোধ চলছিল।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রোকেয়া বেগমের বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর বিরূদ্ধে পাঁচাটি মামলা হয়। মামলার পর তিনি এলাকা ছাড়েন। পরে উচ্চআদালত থেকে সবকটি মামলার জামিন পেলেও রোকেয়া বেগম বাড়িতে ফিরতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর থেকে রোকেয়া বেগমের বাড়ির ওই ৫৩ শতক জায়গা (মসজিদসহ) দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন আতাউর রহমান ও তার লোকজন। বিষয়টি নিয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হন রোকেয়া বেগম। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আদালত ওই জায়গার ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) শেষ বিকেলে আতাউর রহমান ও তার লোকজন ওই জায়গা দখলে নিয়ে পাকা খুঁটি বসিয়ে দেন। তারা মসজিদের মোয়াজ্জেন ও মুসল্লিদের এই মসজিদে আসতে বারণ করে দেন।
সরেজমিনে গেলে দত্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন (৫০) বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মসজিদে জুম’য়াসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আসতেছি। হঠাৎ করে চেয়ারম্যানের ছেলেরা (আতাউর) আইসা আমাদেরকে এই মসজিদে যাইতে না কইরা গেছে। আমরা এই সমজিদে নামাজ পড়তে চাই। মসজিদের মোয়াজ্জেন বজলুর রহমান (৭০) বলেন, এটি ওয়াকফ করা মসজিদ। আমরা কারো বাধা মানব না। এইখানেই নামাজ পড়ব। আমরা কোনো পক্ষের লোকও না।
রোকেয়া বেগম বলেন, ৫ আগস্টের দিন আতাউরের নেতৃত্বে আমার বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সে আমার নগদ টাকা ও স্বর্ণার্ণকার লুট করেছে। আমার দুই কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। এখন তার ভয়ে আমি বাড়িতে যেতে পারি না। সে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমার বাড়িতে অন্যায়ভাবে বেড়া দিয়েছে। কয়েক বছর আগে (১৯৯৩ সালে) আতাউরের পরিবার বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তের বাড়ি দখল করেছে। উল্লাস কর দত্তের স্মৃতি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের মামলা চলছে। ওই বাড়ির নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে সরকার।’ আতাউর রহমান বলেন, গত মে মাসে আমরা ৬০ লাখ টাকা মূল্যে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নাছিমা বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে জায়গাটি কিনেছি। ৪৭ লাখ টাকা দিয়ে বায়না দলিল করেছি। দখল নিয়ে বাকি টাকা পরিশোধ করব। ২০১৬ সালে নাছিমা বেগমকে সুলতান ও তার অপর দুই ভাই পাওয়ার দিয়েছে। তাঁরা বর্তমানে নেই। এই জায়গার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ছাড়া এ জায়গার সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নাই। আমরা এই জায়গার ক্রেতা। তাই দখলে গেছি। তিনি বলেন ৫ আগস্টের দিন তার (রোকেয়া) বাড়িতে হামলা ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। তবে এগুলোর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ মানুষ এসব করেছে।’
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদুল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওই জায়গার ওপর আদালতের স্থিতাবস্থা রয়েছে। আমি উভয় পক্ষকে ঢেকে সেখানে যেতে মানা করেছি। আদালতের পরবর্তি আদেশ না আসা পর্যন্ত সেখানে কোনো পক্ষকেই যেতে দেওয়া হবে না। এই অবস্থায় ওই জায়গায় কেউ যেতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’