শ্রীমঙ্গল উপজেলার ডলুছড়া গ্রামের পরিশ্রমী কৃষক আতর আলী এখন এলাকার অনুপ্রেরণার নাম। পাহাড়ি টিলার ঢালে মাল্টা চাষ করে তিনি হয়েছেন সফল। শুধু তাই নয়, বৈচিত্র্যময় ফলমূল ও ফসল উৎপাদনে তিনি ইতোমধ্যেই অর্জন করেছেন কৃষি বিভাগের শ্রেষ্ঠ কৃষকের সম্মাননাও।
২০২২ সালে শ্রীমঙ্গল কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় আতর আলী তার নিজস্ব উঁচু-নিচু টিলাভূমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন। কৃষি বিভাগ তাকে প্রণোদনা হিসেবে দেয় ২০০টি মাল্টার চারা ও জৈব সার। সেই থেকেই শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়। তিন বছরের পরিশ্রমে এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মাল্টা বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন।
আতর আলী জানান, ‘এ বছর আমার প্রায় সব গাছেই ফল ধরেছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ১৫ থেকে ৩০টি করে মাল্টা এসেছে।’ ২০২২ সালে চারা রোপণের পর ২০২৪ সালে প্রথমবার ৬০-৭০টি গাছে ফলন আসে। সেই বছর তিনি মাল্টা বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আর চলতি মৌসুমে (২০২৫ সালে) মাল্টা বিক্রি শেষে তার মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরগুলিতে ফলন আরও বাড়বে এবং আয়ও কয়েকগুণ হবে।
মাল্টা ছাড়াও আতর আলী তার জমি ও টিলায় কফি, লেবু, লটকন, আনারস, কলা, সুপারি, নাগামরিচ, শসা, করলা, পেয়ারা ও আমসহ নানা জাতের ফলমূল চাষ করছেন। এসব ফসল বিক্রি করে তিনি শুধু নিজেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হননি, বরং আশপাশের কৃষকরাও এখন তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
তার এই বহুমুখী কৃষি সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’ -এর আওতায় আতর আলীকে ‘শ্রেষ্ঠ কৃষক’ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। ঢাকার খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। তিনি পুরস্কারটি গ্রহন করেন সিলেট কৃষি অধিদপ্তর থেকে। আনারস, লেবু ও শসা উৎপাদনের জন্য তিনি এই পুরস্কারটি পেয়েছেন।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা জানান, ‘আতর আলী শুধু একজন সফল চাষিই নন, তিনি এলাকার তরুণ কৃষকদের জন্য একটি উদাহরণ। আধুনিক পদ্ধতিতে মাল্টা ও অন্যান্য ফল চাষ করে তিনি দেখিয়েছেন-উদ্যম, পরিশ্রম ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে কৃষিতেই সফলতা সম্ভব।’
আতর আলীর এখন লক্ষ্য আরও বেশি জমিতে মাল্টা চাষের পরিধি বাড়ানো। তিনি বলেন, ‘কৃষি বিভাগ আমাকে পাশে রাখলে আমি আগামী দিনে মাল্টা চাষ আরও বাড়াবো। একদিন শ্রীমঙ্গলের মাল্টাও সারাদেশে পরিচিত হবে-এই স্বপ্ন নিয়েই এগোচ্ছি।’