রংপুরে জামায়াতে ইসলামী’র ১০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন

এফএনএস (মমিনুল ইসলাম রিপন; রংপুর) : | প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম
রংপুরে জামায়াতে ইসলামী’র ১০ কিলোমিটারব্যাপী মানববন্ধন

“জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে"- বক্তারা পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রংপুরে ১০ কিলোমিটারের বিভিন্ন পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর জেলা ও মহানগর শাখা। 

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় আয়োজিত এ মানববন্ধন নগরীর সিও বাজার থেকে শুরু হয়ে মেডিকেল মোড়, ডিসির মোড়, কাচারি বাজার, শহর এলাকা অতিক্রম করে মডার্ন মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত হয়। এতে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন। এসময় নগরীর কাচারি বাজার পয়েন্টে নেতৃত্ব দেন জামায়াতে ইসলামী রংপুর অঞ্চল, জেলা ও মহানগর শাখার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। 

মহানগর জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক ও মহানগর সেক্রেটারি কে এম আনোয়ারুল হক কাজল এর পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, মহানগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, রংপুর-৬ আসনের জামায়াত মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা নুরুল আমিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন রংপুর মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট কাওছার আলী প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া কোনো নির্বাচনে জনগণের প্রকৃত মতামত প্রতিফলিত হয় না। জুলাই জাতীয় সনদের আলোকে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলেই কেবল ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা জনমতকে অবমূল্যায়ন করছে এবং একদলীয় শাসনের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। তাই পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রীয় সংস্কার, গণহত্যার বিচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন- এই ৫ দফা এখন জাতীয় দাবি। মানববন্ধনে বক্তারা সরকারকে সতর্ক করে বলেন, জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো উপেক্ষা করলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।

মানববন্ধনে জেলা ও মহানগর জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি, বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ, ছাত্রশিবিরসহ সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ন্যায়ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার”অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, “বিগত ২০ বছর ধরে আমরা রংপুরকে প্রদেশ ঘোষণার দাবি করে আসছি। অথচ চিকিৎসা, চাকরি, শিল্পায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রংপুরের মানুষ এখনো চরম বৈষম্যের শিকার। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি, গ্যাস আসেনি, শিল্পকারখানা হয়নি, বেকার সমস্যা রয়ে গেছে-এসব বৈষম্য দূরীকরণে রংপুরকে অবিলম্বে প্রদেশ ঘোষণা করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এক কেন্দ্রিক সরকারের বাজেট নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। জাতীয় বাজেটের ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় ঢাকায়, ২০ শতাংশ চট্টগ্রামে, আর বাকি মাত্র ১৫ শতাংশ সারাদেশে। এ ধরনের বৈষম্য রোধে ৯টি প্রদেশভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।”

সভায় বক্তারা বলেন, রক্তাক্ত জুলাই গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনন্য অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। সেই জুলাই বিপ্লবের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে “জুলাই সনদ”বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থায় অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র (চধৎঃরপরঢ়ধঃড়ৎু উবসড়পৎধপু) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, “বর্তমান দলকেন্দ্রিক গণতন্ত্র চর্চা দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই শ্রমজীবী, পেশাজীবী ও সমাজশক্তিকে শাসন কাঠামোর অংশীদার করে কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে দেশ নতুন ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করবে।”

সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে, রংপুরকে অবিলম্বে প্রদেশ ঘোষণা, একজন মুখ্যমন্ত্রীসহ ৯ সদস্যের প্রাদেশিক সরকার গঠন, এক-তৃতীয়াংশ শ্রেণি-পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ ১৫০ সদস্য বিশিষ্ট প্রাদেশিক পরিষদ গঠন, সমাজশক্তির নাগরিক অধিকার ও ক্ষমতা নিশ্চিত করতে এক ব্যক্তির দুই ভোট পদ্ধতি চালু , দেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সারাদেশে ৯টি প্রদেশ গঠন করার জোর দাবি জানান বক্তারা।

বক্তারা বলেন, “দেশে বিদ্যমান ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের দাবি। রংপুরবাসী তাদের অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাবে।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান রংপুর প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে