জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ছয় তরুণের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ একাদশ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিন দুজন সাক্ষী তাঁদের জবানবন্দি দেবেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর মামলার দশম দিনে শহীদ ওমর ফারুকের বাবা চান মিয়া ১৪তম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন। পরে তাঁকে জেরা করেন পলাতক আট আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ও আসামিপক্ষের পরামর্শকরা। প্রসিকিউশনের আবেদনের পর ট্রাইব্যুনাল আজকের দিন সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন সাইমুম রেজা তালুকদার, তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার।
৮ অক্টোবর নবম দিনের শুনানিতে এএসআই মনিরুল ইসলাম জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। ৭ অক্টোবর সাক্ষ্য দেন কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম, যিনি ঘটনার দিনকার সম্পূর্ণ বিবরণ দেন। ২৮ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে একাত্তর টেলিভিশনের স্থানীয় সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম অনিকের জেরা সম্পন্ন হয়। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁকে জেরা করেন।
২৫ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ দিনে অনিকসহ দুজন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শফিকুল ইসলামের জেরা শেষে নেওয়া হয় আট নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর শফিকুল ও মতিবর রহমান সাক্ষ্য দেন। ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর দুইজন সাক্ষী এবং ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম দিনে শহীদ আস সাবুরের ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের বাবা মো. খলিলুর রহমান তাঁদের বক্তব্য দেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আশুলিয়ার ৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ বিবরণ দেন। ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। উপস্থিত আট আসামির সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান। আদালত তাঁর দোষ স্বীকারের অংশ রেকর্ড করে পরবর্তীতে লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে।
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে আছেন—ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
প্রসিকিউশন গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগপত্রে ৩১৩ পৃষ্ঠার বিবরণ, ৬২ জন সাক্ষীর নাম, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাঁদের লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তখন একজন তরুণ জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকেও পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। নৃশংস এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।