চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের আঙুলে দেওয়া কালি মুছে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, এতে ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। তিন ধাপে যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকায় জাল ভোটের কোনো সুযোগ নেই।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদের ১৫টি ভোটকেন্দ্রে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আয়োজিত এই নির্বাচনে চাকসুর ২৬টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী, আর হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য লড়ছেন ৪৯৩ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন।
ভোটের কালি মুছে যাওয়ার বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “কথা ছিল হাতে দেওয়া কালি মুছবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটু ঘষলেই কালি উঠে যাচ্ছে। আমরা এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিচ্ছি।”
ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিকও সাংবাদিকদের বলেন, “প্রশাসন আরও ভালো কালি ব্যবহার করতে পারত। যেহেতু সবাই বাইরে ঘুরছে, কে ভোট দিয়েছে সেটা চিহ্নিত করা কঠিন হবে। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
ইমরান রায়হান নামে এক ভোটার জানান, “আমি ভোট দিয়েছি, কিন্তু এখন কেউ দেখে বুঝতেই পারবে না। সামান্য ঘষলেই কালি উঠে যাচ্ছে।”
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটি প্যানেল একই অভিযোগ তুলেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ‘দ্রোহ পর্ষদ’, দুপুর ১২টায় ছাত্রদল এবং সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দাখিল করেন।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, “কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহারের আশ্বাস দিয়েছিল। বাস্তবে তা মানা হয়নি। প্রশাসনও দায় স্বীকার করেছে। এতে ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, “আমি নিজে ভোট দেওয়ার পর দেখেছি হাতের কালি উঠে যাচ্ছে। প্রশাসনের দায়িত্বশীলতার জায়গায় প্রশ্ন থেকেই যায়।”
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। বাংলাদেশে এর চেয়ে ভালো কালি পাইনি। বিদেশ থেকে আনতে হলে সময় লাগত। তবে কালি মুছে গেলেও জাল ভোটের কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “ভোটার যাচাই তিন ধাপে হচ্ছে। প্রথমে ভোটারের সিরিয়াল নম্বর, পরে আইডি নম্বর, এরপর নাম ও ছবি মিলিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। তাই একজন ভোটার দ্বিতীয়বার ভোট দিতে পারবেন না।”
ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায় এবং বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। পাঁচটি ভবনের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০টি বুথে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে ১৩টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে ছাত্রদল নিজেদের নামে, ছাত্রশিবির ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ নামে, আর বামধারার সংগঠনগুলো ‘দ্রোহ পর্ষদ’ ও ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ নামে অংশ নিচ্ছে।