বেকারত্বের বেড়াজালে দেশ-এখনই প্রয়োজন বাস্তবসম্মত কর্মসংস্থান নীতি

এফএনএস
| আপডেট: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম | প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
বেকারত্বের বেড়াজালে দেশ-এখনই প্রয়োজন বাস্তবসম্মত কর্মসংস্থান নীতি

বাংলাদেশে বেকারত্ব এখন শুধু একটি অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি পরিণত হয়েছে সামাজিক অস্থিরতা ও হতাশার গভীর সংকটে। সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২০ হাজার-আগের বছরের তুলনায় দেড় লাখ বেশি। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি, কারণ বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করে, তারাও বেকার হিসেবে গণ্য হন না। ফলে প্রকৃত চিত্র থেকে আমরা অনেক দূরে রয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগে স্থবিরতা, মূল্যস্ফীতির চাপ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা মিলে কর্মসংস্থানের চাকা প্রায় থমকে গেছে। ২০২২ সাল থেকে যে মন্দার সূচনা, ২০২৪ সালে এসে তা রূপ নিয়েছে এক গভীর সংকটে। শিল্পকারখানা বন্ধ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস, উৎপাদন কমে যাওয়া-সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ চিত্র। একদিকে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের তরুণরা চাকরির আশায় হতাশ। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা এখন সর্বাধিক। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে সাড়ে ১৩ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং আরও ৭ শতাংশ উচ্চমাধ্যমিক পাস। অর্থাৎ, প্রতি পাঁচজন বেকারের একজন শিক্ষিত তরুণ। শিক্ষা শেষ করে যখন কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলছে না, তখন তার পরিণতি হচ্ছে সামাজিক হতাশা, মানসিক অস্থিরতা, এমনকি অপরাধে জড়িয়ে পড়া। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়াও এ বাস্তবতার প্রতিফলন। কাজ হারানো বা কাজ না পাওয়া মানুষ বাঁচার তাগিদে যেভাবে যেকোনো কাজে নেমে পড়ছে, তা একদিকে ইতিবাচক হলেও অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীন শ্রমবাজারের ইঙ্গিত দেয়। বেকারদের এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারে ঢ়ুকে পড়া অর্থনীতির কাঠামোকে আরও দুর্বল করছে। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এখন বুঝতে হবে, মিষ্টি প্রতিশ্রুতিতে বেকারত্বের সমস্যা সমাধান হবে না। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, এখন জরুরি হলো উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানমুখী বাজেট নীতি। বেসরকারি খাতকে পুনরুজ্জীবিত না করলে কর্মসংস্থানের পথ খুলবে না। একই সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে সহায়তা বাড়ানো অপরিহার্য। বেকারত্ব শুধু অর্থনীতির নয়, এটি সমাজের স্থিতিশীলতারও প্রশ্ন। একটি প্রজন্ম যদি কর্মসংস্থানের সুযোগ না পায়, তবে তা রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত। এখনই প্রয়োজন বাস্তবসম্মত, কার্যকর ও স্বচ্ছ কর্মসংস্থান নীতি-যা শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনবে।