মিরপুরে কেমিক্যাল গোডাউনে উদ্ধার অভিযান শুরুতে লাগবে আরও সময়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
মিরপুরে কেমিক্যাল গোডাউনে উদ্ধার অভিযান শুরুতে লাগবে আরও সময়

রাজধানীর মিরপুর শিয়ালবাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কেমিক্যাল গোডাউনের ভবনে ঝুঁকি থাকায় উদ্ধার অভিযান শুরু করতে আরও ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে পাশের আলম ট্রেডার্স নামের কেমিক্যাল গুদামের আগুনও পুরোপুরি নেভানো গেছে। তবে সেখানে ছয় থেকে সাত ধরনের কেমিক্যাল মজুত ছিল, যা এখনো ঝুঁকি তৈরি করছে। এজন্য উদ্ধার অভিযান শুরু করতে বাড়তি সময় লাগবে।

তাজুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় ধরে আগুনে পুড়ে ভবনের কলামসহ বেশ কিছু অংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা গেছে, তাই ভবনে সরাসরি প্রবেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমরা ধাপে ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করছি। উদ্ধার অভিযান শুরুর আগে বিশেষজ্ঞ দল ভবনটি পরিদর্শন করবে। সব মিলিয়ে অভিযান শুরু হতে আরও ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে।”

নিখোঁজদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলম ট্রেডার্সের মূল দরজায় তালা মারা ছিল, যা ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে কেটে খুলতে হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগুন লাগার সময় কেউ ভেতরে ছিলেন না। তবে সার্চ অপারেশন না চালানো পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।

কেমিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তিনি আরও বলেন, “এই রাসায়নিকগুলো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর তেজস্ক্রিয়তা রক্তে মিশে যায় এবং চার থেকে পাঁচ শ গজ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এলাকাটি বিপজ্জনক হওয়ায় আমরা মাইকিং করে সবাইকে দূরে থাকার অনুরোধ জানিয়েছি।”

এর আগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে মিরপুর শিয়ালবাড়ির পোশাক কারখানা ও কসমিক ফার্মা নামের একটি কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস খবর পায় এবং ১১টা ৫৬ মিনিটে প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ধীরে ধীরে মোট ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলায় থাকা পোশাক কারখানার অংশ সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। সেখান থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা।

রাসায়নিক গুদামটি অবৈধ

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, আলম ট্রেডার্স নামের রাসায়নিক গুদামটি অবৈধ ছিল। সংস্থাটির তৈরি করা অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এই গুদামের নাম আগে থেকেই ছিল এবং তিনবার নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে জানিয়ে তিনবার নোটিশ দিয়েছিলাম। অভিযান চালানোর প্রক্রিয়ায়ই ছিলাম, এর মধ্যেই দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল।”

তাজুল ইসলাম বলেন, “এখানে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মজুত ছিল। কী ধরনের কেমিক্যাল বা এর পরিমাণ কত, তা যাচাই করা হচ্ছে। ড্রোন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভেতরের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “গুদামের কাঠামো আগুনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময় তাপের কারণে ভবনের পিলার দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাজউক ও ভবন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে