জামালপুরের বকশীগঞ্জে এলজিইডির অর্থায়নে একটি সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কাজে নিম্নমানের ইট ও মাটি মিশ্রিত বালু ব্যাবহারের অভিযোগে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও এলাকাবাসী। বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে কাজে অনিয়ম পান ইউএনও শাহ জহুরুল হোসেন। পরে তিনি সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ করে দেন। তবে দুই নম্বর ইট ও খোয়া সরিয়ে ভালো মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দরপত্র অনুযায়ী কাজ না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের হুশিয়ারীও দিয়েছেন।
জানা যায়,বকশীগঞ্জ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বটতলা মোড় হতে মধ্য বাজার হয়ে মেরুরচর ইউনিয়নের জব্বারগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি সড়ক।দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিশেষ করে বাসস্ট্যন্ড থেকে পুরাতন গরুহাটি পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। একেবারে চলাচলের অনুপযোগী। জরাজীর্ন চার হাজার ৯শ মিটার সড়কটি মেরামতে দরপত্র আহবান করে এলজিইডি। ব্যায় ধরা হয় দুই কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মেসার্স সৈকত এন্টার প্রাইজ কাজটি পান। শিডিউল অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর কাজ শুরু করে ২০২৫ সালের ২৬ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়। কিন্তু যথাসময়ে কাজ শুরু হয়নি। দেরিতে কাজ শুরু করলেও নিম্ন মানের ইট খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ উঠে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। নিম্মমানের ইট খোয়ার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পোষ্ট করেন। নেটিজেনদের প্রতিবাদ বাড়তে থাকে। দাবি উঠে কাজ বন্ধ করার। দাবি উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যান ঠিকাদারের লোকজন। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে কাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা। পৌর বিএনপি, ছাত্রদল, গণ অধিকার পরিষদের আহবায়কসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। বুধবার দুপুরে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন ইউএনও।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী পায়েল টেলিকমের মালিক মারুফ হাসান বলেন,একে বারে নিম্ম মানের কাজ হচ্ছে। ইট গুলো দুই নম্বর এবং মাটি মিশ্রিত বালু। এ রাস্তা অল্পদিনেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
উপজেলা গণ অধিকার পরিষদের আহবায়ক প্রকৌশলী শাহরিয়ার আহম্মেদ সুমন বলেন, সরকারি দরপত্র অনুযায়ি কাজ করা হচ্ছে না। রাস্তার কাজে দুই নম্বর ইট ও খোয়া ব্যাবহার করা হচ্ছে। নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কারনে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। অনিয়ম করে কোন কাজ করতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
পৌর বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যাবসায়ী ভাটি সাইফুল বলেন, রাস্তাটি অনেক জনগুরুত্বপূর্ন। রাস্তা নির্মাণ কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যাপক অনিয়ম করছেন। দুই নম্বর ইট দিয়ে যে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে তা বেশিদিন টিকবে না। শিডিউল অনুযায়ী কাজ না হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজের দায়িত্বে থাকা ফয়জুর রহমান জানান,প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বন্ধ রয়েছে। এলজিইডি অফিস যেভাবে নির্দেশনা দিবে সে ভাবেই কাজ করা হবে। পরবর্তীতে কজের মানের অবশ্যই উন্নতি হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সামছুল হক বলেন,কাজের মান নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনও বিব্রত। নির্মাণ কাজের মান উন্নয়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার বলা হলেও নির্দেশনা মানছেন না। তারা প্রশাসনের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে মনগড়াভাবে কাজ করেন। পরবর্তীতে তারা যদি শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করেন তাহলে বিল বন্ধ করে দেয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ জহুরুল হোসেন জানান, কোন মাস্তানি চলবে না,কাজ হবে নিয়ম মাফিক। নিম্ম মানের সামগ্রী সরিয়ে শিডিউল মাফিক কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। নির্দেশনা না মানলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।