দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ধর্ষন চেষ্টা ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনায় ভূক্তভোগি নারী বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এ ঘটনাটি গত ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১ ঘটিকায় উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের রাণীপুর গ্রামের চাঁন পাড়ায় গরুর খামার ও মাছ ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের বাড়িতে ঘটেছে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের উত্তর খামার সাতনালা গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে ও সাতনালা ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মর্তুজা হোসেন (৪৮) ব্যবসায়িক ও পুর্ব পরিচিতির সুত্র ধরে গত ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১ ঘটিকায় রাণীপুর গ্রামের জনৈক বেলাল হোসেনের বাড়িতে প্রবেশ করে তার স্ত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে স্পর্শ করে ও পড়নের কাপড় টেনে ছিড়ে ফেলে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। এসময় বেলাল হোসেন বাড়িতে পৌঁছে স্ত্রীর সংগে ধস্তাধস্তি দেখতে পেয়ে ধর্ষন চেষ্টাকারী মর্তুজাকে আটক করে ঘরে আটক করে রাখে। রাত আড়াইটার টার পর ধর্ষণ চেষ্টাকারীর ছোট ভাই মমিনুল ইসলাম (৪৫), আনিসুর রহমান (৩৯) ও মর্তুজার ছেলে মুন্না (২২) সহ অজ্ঞাত ৯/১০ জন ব্যাক্তি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জনৈক বেলাল হোসেনের বাহিরের দরজা ভেঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়িঘর ভাংচুর করে। এসময় তাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে বাড়ির লোকজনকেও বেধড়ক মারপিট করে ঘরের তালা ভেঙ্গে মর্তুজাকে বের করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, মর্তুজার লোকেরা বাড়িঘর ভাংচুর করে ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন ও তার ব্যবসার ৩ লক্ষ টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় প্রতিবেশি একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেলাল ও মর্তুজার গভীর সম্পর্ক। প্রায়ই মর্তুজা বেলালের বাড়িতে আসত। বেলাল থাকলেও আসত, না থাকলেও আসত। ওই দিন মর্তুজা রাতে আসলে, তাকে ঘরে আটক করে রাখে। পরে রাত পৌনে ৩ টার দিকে তার ভাই ও ছেলে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটির ব্যাপারে মর্তুজা হোসেন বলেন, আমি জামায়াতের সাতনালা ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইছামতি ডিগ্রী কলেজের অভিভাবক সদস্য। গরুর ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক বন্ধু বেলাল আমাকে পরিকল্পনা করে সুকৌশলে ডেকে নিয়ে ঘরে আটকে রেখে ব্যাপক মারধর করে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ২ টি গাভী ও ২ টি বাছুর দাবি করে। এরপর ফাঁকা স্ট্যাম্প বের করে গরু বাছুরের দাম হিসেবে ৪ লক্ষ টাকা নিয়েছি, এমন মিথ্যা কথা জোরপুর্বক লিখে নেয় এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। রাতের মধ্যেই গরু বাছুর বাড়ি থেকে কাউকে দিয়ে আনতে বলে। টাকা ও গরুর জন্য দফায় দফায় মারধর করে। এক পর্যায়ে রাত পৌনে ৩ টায় ছেলেকে ডাক দেই। তখন সে আত্মীয় স্বজন নিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে চিরিরবন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছি। এ ঘটনার প্রকৃত সুবিচার দাবি করে আমরাও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় চিরিরবন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরজমিনে গেলে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ওই রোগী সিটে থাকছেন না, খাড়া রোগী, কোথায় কোথায় ঘুরছেন, বোঝেন তো। তবে রাতে এসে থাকছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রুহুল আমিন বলেন, এ ঘটনায় বেলাল হোসেনের স্ত্রী ও মর্তুজা হোসেনের ছেলে মুন্না বাদি হয়ে চিরিরবন্দর থানায় গত ১৫ অক্টোবর বুধবার রাতে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটির তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।