নদী দখলে ইউএনও’র অভিযান, জরিমানা ও ১০ দিনের কারাদন্ড

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
নদী দখলে ইউএনও’র অভিযান, জরিমানা ও ১০ দিনের কারাদন্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রকাশ্যে নদী দখল চলছিল গত কয়েকমাস ধরে। বৃহস্পতিবার ও বুধবার ‘তরী’ বাংলাদেশের আহবায়ক শামীম আহমেদ উনার ফেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে দলখের ভিডিও দিয়ে ষ্ট্যাটাস দেন। বিষয়টি প্রশাসনসহ সকলের নজরে আসে। গতকাল দুপুরের দিকে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের ধর্মতীর্থ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মোশারফ হোসাইন। অভিযানকালে তিনি এক ব্যক্তিকে আটক করে কৃত অপরাধের দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে আরো ১০ দিনের কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন ম্যাজিষ্ট্রেট। 

ইউএনও’র দফতর ও স্থানীয়রা জানায়, গত কয়েক মাস আগে সড়কের পাশে কে বা কারা একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন। এটিতে লেখা-‘ক্রয় ও বায়না সূত্রে এই জমির মালিক এস.এম ওসমান উল্লাহ গং। বেশ কয়েকটি দাগ উল্লখ করে লেখা রয়েছে জমির পরিমাণ ১৭১০ শতাংশ। ঠিকানা- ঢাকার ধানমন্ডি।’ সাইনবোর্ড সংলগ্ন নদীতে গত কয়েকমাস ধরে রাতে অল্প করে কাল রং-এর মাটি ফেলতে শুরূ করেন। আস্তে আস্তে সেখানে প্রকাশ্যে মাটি ফেলতে শুরূ করেন। গত কয়েক মাসে নদীর বেশ অংশে মাটি ফেলে ভরাট করেছেন। ৩-৪ দিন আগে বিষয়টি নজরে আসে নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন সংঘটন ‘তরী’ বাংলাদেশের আহবায়ক শামীম আহমেদের। তিনি ষ্টিল ছবি ও ভিডিও আপলোড করে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেন। এরপরও আবার গতকাল বেকু লাগিয়ে মাটি ফেলে নদী করতে থাকে। আবারও তিনি ভিডিও আপলোড করে ষ্ট্যাটাস দেন। ষ্ট্যাটাসে তিনি সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিষয়টি প্রশাসন ও স্থানীয় লোকদের নাড়া দেয়। দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মোশারফ হোসাইন। মাটি ভরাটের কাজে নিয়োজিত শাকিল আহমেদ (৩০) নামের ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করেন। শাকিল নিজেকে এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক পরিচয় দেন। ফিরোজপুর জেলার আহাম্মদ উল্লাহর ছেলে শাকিল। কৃত অপরাধের দায় স্বীকার করায় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মোশারফ হোসাইন শাকিলকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন। বেকুটি জব্দ করে পুলিশের জিম্মায় দিয়েছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভরাটকৃত মাটি সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমন জনগুরূত্বপূর্ণ কাজ করায় ইউএনও কে তরী ও স্থানীয় লোকজন বাহবা দিচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাটি ভরাটের মূল হোতা এস.এম অলিউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। উনার বাড়ি গোপালগঞ্জ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি খুবই প্রভাবশালী ছিলেন। উনার তদবিরে দেশের বড় কর্তাদের বদলির আদেশ হত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুর বিসিকে অলিউল্লাহর কারখানা রয়েছে। আর ওই কারখানার পরিত্যক্ত কেমিকেল ফেলে নদী দখল করতেন।  সাইন বোর্ডে লেখা এস.এম ওসমান উল্লাহ হচ্ছেন অলিউল্লাহর ছেলে। ক্ষমতার প্রভাবে অলিউল্লাহ কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। তরী বাংলাদেশের আহবায়ক শামীম আহমেদ বলেন, নদী দখলরোধে ইউএনও’র এই পদক্ষেপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দখলবাজরা দখলে নিরূৎসাহিত হবে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, পরিবেশের আইন লঙ্গণকারীদের কোন ভাবেই ছাড় নেই। তাই নদী দখলের চেষ্টা কারীকে জরিমানা ও কারাদন্ড দিয়েছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ওই জায়গা থেকে মাটি সরিয়ে না নিলে তাদের বিরূদ্ধে আরো কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে