সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানি সংগ্রহে কষ্ট লাঘবে উন্নয়ন সংস্থা প্রেরণা’র উদ্যোগে পিএসএফ স্থাপন করা হয়েছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের সাপেরদুনে গ্রামের ক্ষীরধর বাড়ি মন্দিরের পাশে ‘প্রেরণা’ স্থাপিত পিএসএফ-টি উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন। ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল খসরু, সিরাজুল ইসলাম সানা, মোশারফ হোসেন, উত্তরণের টেকনিক্যাল ম্যানেজার বিলকিস খাতুন প্রমুখ। পিএসএফ এর উপকারভোগী শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউনিয়নের সাপেরদুনে গ্রামের দিলীপ মন্ডলের স্ত্রী কবিতা মন্ডল (৩৫) বলেন, এক কলসি খাবার পানি আনতে হাঁটতে হতো প্রায় ২-৩ মাইল। এখন আর হাঁটা লাগবে না। গ্রামে পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) স্থানের ফলে তাদের সুপেয় পানি সংগ্রহের সেই দীর্ঘদিনের কষ্ট এখন লাঘব হবে। কবিতা মন্ডলের যখন বিয়ে হয়, তখন তিনি কিশোরী। শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখেন ঘরের ধারেকাছে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। আধা ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পাশের গ্রামের গাজী বাড়ির পুকুর থেকে পানি আনা শুরু করেন তিনি। সেই যে শুরু, এরপর থেকে প্রতিদিন দেড় দুই ঘণ্টা ব্যয় করে পানি সংগ্রহ করাই হয়ে উঠলো তার নিত্যদিনের কাজ। কবিতা মন্ডল আরও বলেন, বড়লোকেরা তা ভ্যানে করে পানি আনে। কখনো গাজী বাড়ির পুকুর, কখনো আরো দূরে বিড়ালক্ষীর পানির প্লান্ট থেকে পানি আনতে বেশ সময় লাগত। সরাসরি পুকুরের পানিতে যে জীবাণু থাকে তা জানতাম না। ওই পানির জইন্যেই যে অসুখবিসুখ হয় তাও জানা ছিল না আমাদের। উপায় তো নেই, ওই পানিই খাতাম। খেতে খেতে এখন একরকম অভ্যাস হয়ে গেছে। শুধু কবিতা মন্ডল নন, এখানকার কয়েকটি গ্রামের ৩০০-৪০০ পরিবারের মানুষ প্রতিদিনই সুপেয় পানির জন্য এমন সংগ্রাম করে আসছেন। তারা সবাই আগে এক কিলোমিটার দূরের পাশের গ্রামের গাজী বাড়ির পুকুর বা কখনো আরো দূরে বিড়ালক্ষীর পানির প্লান্ট থেকে পানি সংগ্রহ করতো। তাদের এই দুর্ভোগ লাঘবে পন্ড স্যান্ড ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন করে দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘প্রেরণা’। পানির ব্যবস্থা হওয়ায় এখন বেজায় খুশি গ্রামের মানুষ। স্থানীয়রা জানান, এখন পানি আনার জন্য দূরে যেতে হবে না। আগে অনেক সময় পুকুরের পানি সরাসরি খেতে হতো। তাতে পেটের অসুখ হতো। এখন পেটের অসুখও অনেক কম হবে। আগে যে সময় নিয়ে পানি আনতে হতো সেই সময়ে তাঁরা এখন বাড়ির উঠানে সবজি বাগান, হাঁস-মুরগী পালন, পুকুরে মাছের পরিচর্চা করতে পারবেন। প্রেরণার নির্বাহী পরিচালক শম্পা গোস্বামী বলেন, আগে ওই এলাকার মানুষকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে প্রায় ১ থেকে ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। সময় ব্যয় হতো ৩-৫ ঘণ্টা। সেই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে এই পিএসএফ-টি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও এই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে ৪টি টিউবওয়েল, ২টি সাঁকো, ২০টি শৌচাগার, ১৭টি পানির ট্যাংকি, ৩টি ন্যাপকিন কর্নার ও ১৫ জনের মাঝে আয়বৃদ্ধিমূলক উপকরণ বিতরণ, ১৬জনের সবজি চাষের ব্যবস্থা এবং একটি রাস্তা নির্মাণসহ ওই রাস্তার পাশে গাছ লাগানো হয়েছে।