ঢাকাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তবে অন্য অঞ্চলের তুলনায় রাজধানীতে অপরাধ বেশি বেড়েছে। চুরি, ছিনতাই, খুন ইত্যাদি ক্রমেই বাড়ছে। অপরাধীরা এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা পুলিশের উপর আক্রমণ করতেও দ্বিধা করছে না। এতে নগরবাসী আতঙ্ক ও শঙ্কায় রয়েছে। অন্যদিকে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও গাফিলতিও রয়েছে। মোহাম্মদপুর, মগবাজার, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি তারা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় গিয়ে অপরাধ করছে। অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ দেশের শোচনীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বেকারত্ব, অভাব-অনটন ইত্যাদি। অন্যদিকে, মব ভায়োলেন্স, রাজনৈতিক অস্থিশীলতা, পুলিশের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করাও অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও দখলদারিত্ব নিয়ে বিরোধের কারণে অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাজধানীর উপকণ্ঠে বাসাবাড়িতে ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। দেশের অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিত না থাকায় বিভিন্ন স্থানেই চলছে নৈরাজ্য, লুটপাট আর ডাকাতি। ডাকাতরা ধনী ও প্রবাসীদের বাড়ি টার্গেট করে লুটপাট চালাচ্ছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা মামলা করলেও ডাকাতরা ধরা পড়ছে না। উদ্ধার হচ্ছে না লুণ্ঠিত মালামাল। বিচারহীনতার ফলে মোটামুটি নির্ভয়েই অপরাধ করে যাচ্ছে। বেড়েছে ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে চাঁদাবাজির ঘটনা। মব সৃষ্টি করেও চাঁদাবাজি হচ্ছে। ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুকন্যা থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়েই সাধারণ মানুষ চরম উৎকণ্ঠায়। উদ্বেগ-আতঙ্ক মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। রাত জেগে পাহারা দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসের (জানুয়ারি-আগস্ট) হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৫৪০টি মামলা হয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে মামলা হয়েছিল ৪৪৫টি। আগের বছরের চেয়ে চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে হত্যা, ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের জেরে ৯৫টি মামলা বেশি হয়েছে। আর ২০২৩ সালের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে ১৬০টি মামলা বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালে মাসে গড়ে মামলা হয়েছিল ১৩৫টি। কোনো সমাজে, কোনো দেশেই অপরাধকে একেবারে নির্মূল করা যায় না। তবে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা হলে অপরাধপ্রবণতা কমে। কিন্তু দেশে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে আর পুলিশ থাকবে উদাসীন; এমন অবস্থা জননিরাপত্তা ব্যবস্থা নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত দেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে।