অ্যানথ্রাক্স প্রাণীবাহিত একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ, যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়। মূলত গরু, ছাগল, ভেড়া-এ ধরনের প্রাণী অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছোট গুটি আকারের, যেটিকে স্পোর বলে। এই স্পোর মাটিতে অনুকূল পরিবেশে অনেক বছর, দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকতে সক্ষম। সুস্থ গবাদিপশু ঘাস খেতে যায় মাঠে, সেখানে যদি অ্যানথ্রাক্সের স্পোর থাকে এবং ঘাস খাওয়ার সময় মুখের কোনায় কেটে গেলে সেখান দিয়ে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু অনুপ্রবেশ করতে পারে। আর এভাবে গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে গেলে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর জন্য অনেকে জবাই করে মাংস বিক্রি করতে চায়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত পশু জবাই করার পর মাংস, রক্ত, চামড়ার সংস্পর্শ থেকে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায় না, আক্রান্ত প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সাতটি জেলায় অ্যানথ্রাক্সের ১৫টি প্রাদুর্ভাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এই সময়ের মধ্যে ২৪৬ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। তবে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। চলতি ২০২৫ সালে ৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৬ জনের দেহে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে ৫০, ২০২৩ সালে ৭৮ এবং ২০২২ সালে ৬২ জনের দেহে এই রোগ শনাক্ত হয়। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দুটি প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে একটি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা, অন্যটি রংপুরের পীরগাছা উপজেলা। এর বাইরে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আইইডিসিআরের তথ্যে তা পাওয়া যায়নি। অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের জন্য ‘ওয়ান হেলথ’ পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি, যেখানে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যকে একত্রে দেখা হয়। আক্রান্ত এলাকায় গবাদিপশুকে নিয়মিত অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সচেতন করতে হবে। সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জনসাধারণের আতঙ্ক দূর করে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। অ্যানথ্রাক্স প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। তাই স্থানীয় ভাষায় পোস্টার, লিফলেট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যানথ্রাক্সের সব তথ্য উন্মুক্ত থাকা জরুরি। এতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে।