আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান প্রথমবারের মত জাতীয়ভাবে পালন হতে যাচ্ছে। জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই লালন ভক্ত, অনুরাগী আর দর্শনার্থীদের ভীড়ে সরগরম গোটা এলাকা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও লালন একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের প্রস্ততি শেষ হয়েছে। নানা ধরনের শঙ্কা থেকে এবার আইন-শৃংখলা বাহিনী কঠোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) পহেলা কার্তিক আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবসের ৩ দিনব্যাপী আয়োজন শুরু হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রথমবার জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মরমী সাধক লালন ফকিরের তিরোধান দিবস। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে শেষ হয়েছে সাজসজ্জাসহ আয়োজনের নানা প্রস্ততি। তবে উৎসবের আগেই পা ফেলার মত জায়গা নেই মাজার প্রাঙ্গনে। গান-আলোচনায় মেতে উঠেছেন ভক্তরা। লালন ফকিরের দর্শন ও চিন্তা চেতনা থেকে শিক্ষা নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্ত-অনুরাগীরা। রাজশাহী থেকে আসা তরুণ আকবর আলী বলেন, এই প্রথম এসেছি। অনেক লোকের সমাগম হয়েছে। সব ঘুরে-ঘুরে দেখছি, গান শুনছি। জাতীয় অনুষ্ঠান হওয়ায় এবার আলাদা আবহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন আগত ভক্তরা। লালনের গানের ভাবধারায় ডুবে যান ভক্তরা। গান গেয়ে খুশি তার ভক্তরা। তাদের মতে এবারে জমজমাট আয়োজন হচ্ছে। বাউল মোতালেব আলী বলেন, এবার জাতীয়ভাবে হচ্ছে সাঁইজির তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান। তাই আগের থেকে যথেষ্ট সাড়া পড়েছে। মাঠের অবস্থা ভাল। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।’ অনুষ্ঠান ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। শঙ্কা থেকে এবার বাড়ানো হয়েছে র্যাব-পুলিশের সংখ্যাও। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বলেন, অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শেষ করতে যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল ও মতের লোকদের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন,‘ শঙ্কা নেই তেমন। তারপরও যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবার ফোর্সের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। র্যাব ও পুলিশ আলাদা চেকপোস্ট বসিয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন,‘লালন ফকিরের দর্শনকে এবার ফোকাস করা হচ্ছে। সারা দুনিয়ার মানুষ এখানে আসে। আমরা অনুষ্ঠানকে স্বার্থক করতে সবার সহযোগিতা নিয়ে আয়োজনের প্রস্ততি শেষ করেছি। প্রচুর লোক আসবে মনে হচ্ছে। ফকির লালন ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে লালন ভক্তরা তিরোধান দিবস পালন করে আসছে। আজ ১লা কার্তিক (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকে সাধু সঙ্গের মধ্যদিয়ে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ বিকেল ৪টায় জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও গানের অনুষ্ঠান। লালন একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন-সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মফিদুর রহমান। লালন বক্তৃতার মুখ্য আলোচক আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান লেখক ও গবেষক প্রফেসর গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখবেন-বিশিষ্ট কবি, লেখক ও চিন্তক এবং লালন বিশেষজ্ঞ ফরহাদ মযহার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আল মামুন। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা ৬টা হতে শুরু হবে লালন সংগীতানুষ্ঠান। এতে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দ সংগীত পরিবেশন করবেন।