ব্যাংক খাতের আস্থাহীনতা: দায়ীদের দায় নিশ্চিতে এখনই পদক্ষেপ দরকার

এফএনএস | প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
ব্যাংক খাতের আস্থাহীনতা: দায়ীদের দায় নিশ্চিতে এখনই পদক্ষেপ দরকার

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আজ গভীর আস্থাহীনতার সংকটে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো যে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা’ বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে, তা নানা অসংগতিতে ভরা। প্রকৃত সৎ উদ্যোক্তারা সেখানে “ইচ্ছাকৃত খেলাপি”হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, আর প্রকৃত খেলাপিরা-যাঁরা পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ না করে অর্থ অন্য খাতে সরিয়ে নিয়েছেন-তাঁদের অনেকে তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন। ফলত, নিরপরাধরা অপরাধী হয়ে যাচ্ছেন, আর প্রভাবশালীরা দায়মুক্তি পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা ৩,৪৮৩ জন, যাঁদের কাছে আটকে আছে প্রায় ২৮ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। অথচ বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ব্যাংকগুলোর পক্ষপাতিত্ব, রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুর্বল তদারকির কারণে তালিকাটি বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। এমনকি কিছু ব্যাংক সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দিয়েছে। এর ফলে স্বচ্ছতা আনতে নেওয়া উদ্যোগই পরিণত হয়েছে আরেকটি অনিয়মের উদাহরণে। অর্থনীতিবিদদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গৃহীত ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধিত) আইন ২০২৩ খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগীদের জন্য সহজ তফসিল ও নীতি সহায়তার সুযোগ তৈরি হওয়ায় শৃঙ্খলার পরিবর্তে ব্যাংক খাতে বেড়েছে দায়মুক্তি সংস্কৃতি। আজ আওয়ামী সরকারের পতনের পর যে আর্থিক অনিয়মগুলো প্রকাশ্যে আসছে, তা আসলে দীর্ঘদিনের গোপন রোগের বহিঃপ্রকাশ। ২০২৫ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা-যা মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। এই বিশাল অঙ্কের দায়ভার এখন বহন করছে সাধারণ জনগণ, কারণ বাজেট থেকে করদাতার অর্থ ব্যবহার করে ব্যাংকগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ চলছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়-যাঁরা এই সংকট সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা কোথায়? এই পরিস্থিতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, নৈতিকভাবেও উদ্বেগজনক। যখন অনিয়মকারী দায়মুক্তি পান আর সৎ উদ্যোক্তা অপবাদে জর্জরিত হন, তখন বাজারে আস্থা টেকে না, বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়, এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা রুগ্ণ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের ভাষায়, “সবার জন্য এক দৃষ্টিভঙ্গি”জরুরি। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হলো-প্রভাবমুক্ত, তথ্যনির্ভর, এবং ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়ায় খেলাপি চিহ্নিত করা। এখনই সময় দায়ীদের দায় নিশ্চিত করা, না হলে ব্যাংক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা আর ফিরবে না।