হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের জেরে শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা বন্ধ ছিল সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা। এতে দেশি-বিদেশি শতাধিক ফ্লাইটের সময়সূচি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, বিপাকে পড়েন হাজারো যাত্রী। বিশেষ করে বিদেশগামী ও ট্রানজিট যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল চরমে।
ফেনীর ওমর ফরহাদ জনি দুবাইগামী যাত্রী ছিলেন। নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন, তার ফ্লাইটের সময় পরিবর্তন হয়েছে। কখন ছাড়বে সেই নিশ্চয়তাও মেলেনি। উদ্বিগ্ন জনি বলেন, “কখন উঠতে পারব বুঝতে পারছি না, অফিসে সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে বিপদে পড়ব।”
তার মতো আরও অসংখ্য যাত্রী শনিবার শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পড়েন শিডিউল বিপর্যয়ের ফাঁদে। কেউ কেউ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছেন প্রস্থান লাউঞ্জে, কেউ অপেক্ষা করেছেন লাগেজ নিয়ে চেয়ারে বসে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় ক্লান্ত, হতাশ যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিমান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, আগুনের কারণে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি দেখা দেয়ায় দুপুর থেকে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখতে হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাত ৯টার দিকে পুনরায় ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। তবে সব ফ্লাইট নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চালু করা সম্ভব হয়নি।
বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, “ফ্লাইটগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। শিডিউল বিপর্যয় সম্পূর্ণ নিরসনে কিছুটা সময় লাগবে।” তিনি আরও জানান, বিমানবন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে রাতভর কাজ চলছে।
এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণার পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মিলিয়ে আটটি ফ্লাইট অবতরণ করে। এছাড়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুটি বোয়িং বিমান বিকল্পভাবে অবতরণ করে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুনে কার্গো ভিলেজের কিছু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মূল রানওয়ে এবং কন্ট্রোল টাওয়ার নিরাপদ রয়েছে। দ্রুতই বিমান চলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ থাকলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। কারণ শাহজালাল বিমানবন্দর থেকেই প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এক ঘণ্টার বিঘ্নও এখানে কয়েক হাজার যাত্রীর সময়সূচি ভেঙে দেয়।