পাবনার সাঁথিয়ায় জনতা ব্যাংক পিএলসি বনগ্রাম শাখার গ্রাহকদের ৯কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিমের বিরুদ্ধে।এ ঘটনায় জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুজ্জামানের দায়ের করা মামলায় আতাইকুলা থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তাার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের বিয়য়টি নিশ্চিত করেছেন জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো.ফরিদুজ্জামান।
এদিকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তারের খবরে ছড়িয়ে পড়লে রোববার(১৯অক্টোবর)ব্যাংকে গ্রাহকদের উপচেপড়া ভীড় জমে।এসময় প্রায় শতাধিক গ্রাহক ব্যাংকে প্রবেশ করে তাদের একাউন্ট যাচাই করে জানতে পারে তাদের একাউন্টে জমাকৃত অর্থ নেই। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে ব্যাংকের আশপাশের এলাকার জনগণ। এ সময় টাকা খোয়া যাওয়ায় ব্যাংকে গ্রাহকদের কান্নার রোল পড়ে যায়।
ব্যাংক ও গ্রাহক সূত্রে জানা যায়, জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিম দীর্ঘদিন যাবৎ কৌশলে গ্রাহকদের ৯ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন।গত বুধবার (১৫অক্টোবর) বনগ্রামের ব্যবসায়ী উপজেলার সাগরদারী গ্রামের আব্দুস সালাম ব্যাপারী জনতা ব্যাংক বনগ্রাম বাজার শাখায় টাকা তুলতে গেলে তার হিসাবে টাকা নেই বলে ব্যাংক হিসাব রক্ষক জানালে বাগবিতন্ডা ও তুলকালাম কান্ড ঘটে। এ সময় আব্দুস সালামের ডাক চিৎকারে আশপাশের ব্যবসায়ী গ্রাহকরা ব্যাংকে জড়ো হয়ে তাদের হিসাব নম্বর চেক করলে দেখা যায় প্রায় গ্রাহকেরই জমা রাখা টাকা কম। বিষয়টি ব্যাংকে পাবনার জেলা কার্যালয়কে জানালে তারা এসে ঘটনার সত্যতা পায়। এ নিয়ে রাতভর যাচাই বাছাই করে অভিযুক্ত হেমায়েত করিমকে পুলিশ হেফাজতে দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় ১৬অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে মো.ফরিদুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।ওই দিনই ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় পূর্বের ব্যবস্থাপক হেমায়েত করিমের বিরুদ্ধে ৯কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগি বনগ্রামের ব্যবসায়ী তনয় ভ্যারাইটিস দোকানের মালিক তনয় সাহা জানান,তার সিসি লোনের ৪৯ লক্ষ টাকা হিসাব থেকে উধাও হয়েছে। তিনি আরও জানান, টাকা হিসাব থেকে তুলে নেবার পূর্বে মোবাইলের ম্যাসেজ অবশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সাগরদারি গ্রামের সালাম ব্যাপারী জানান,আমি গরুর ব্যবসা করি।ব্যবসার সব টাকা জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখায় রেখেছিলাম। গত বুধবার(১৫অক্টোবর) দুপুরে ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে দেখি আমার হিসাব থেকে ৪১ লক্ষ টাকা নেই। তিনি টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
খালইভড়া গ্রামের শাপলা খাতুনের ১৬ লক্ষ টাকার জমা রশিদ দিলেও ওই টাকা হিসাব নম্বরে জমা হয়নি। ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিন্চুর হিসাব থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঊধাও হয়ে গেছে। বনগ্রামের আব্দুল মতিনের ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা,রাজাপুর গ্রামের হযরত আলীর ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা,বহল বাড়ীয়া গ্রামের আবু জাফরের ৫লক্ষ টাকাসহ বিভিন্ন গ্রাহকের টাকা বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাত করা হয়েছে।
বনগ্রাম জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ফরিদুজ্জামান বলেন,অভিযুক্ত হেমায়েত করিম কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রাহকদের থেকে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে। অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনতা ব্যাংক পাবনা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মঞ্জুরুল হক জানান,বিষয়টি বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং ঢাকা হেড অফিস থেকে কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা জানা যাবে। অভিযুক্ত ম্যানেজার বর্তমানে জেল হাজতে আছেন।
আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)সৈয়দ আলমগীর হোসেন বলেন,জনতা ব্যাংক বনগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো.ফরিদুজ্জামানের অভিযোগের ভিত্তিতে ৯কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বনগ্রাম শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হেমায়েত করিমকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে পাবনা আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।